পুরুলিয়ায় ভাঙন কংগ্রেসে, ‘মেগা যোগদান’ ঘাসফুলে, নীরব বাম শরিক

প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সম্পাদক পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আলাদা করে জাতীয় কংগ্রেসের তো কোনও পার্থক্য নেই। আগেও আমরা মমতাদির সঙ্গে কাজ করেছি। সিপিএম তো বিজেপির পার্টি হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।"

পুরুলিয়ায় ভাঙন কংগ্রেসে, 'মেগা যোগদান' ঘাসফুলে, নীরব বাম শরিক
যোগদান পর্ব, ছবিসূত্র: ফেসবুক
Follow Us:
| Updated on: Jun 19, 2021 | 11:47 PM

পুরুলিয়া: বঙ্গভোট আবহে জেলা জুড়ে জোটে জট দেখা গিয়েছিল। সিপিএম-কংগ্রেস-আইএসএফের ‘নিষ্ফলা’ জোট কার্যত ‘উদরপূর্তি’ করেছে ঘাসফুলের (TMC)। নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে ইতিমধ্যেই আলিমুদ্দিনে বড় শরিক সিপিএমকে খোঁচা দিতে শুরু করেছে ছোট শরিকরা। অন্যদিকে, সিপিএম-আইএসএফের সঙ্গে জোটে কার্যত জেতা আসন হাতছাড়া হয়েছে বলে বারবার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস।

শনিবার, একযোগে তৃণমূলে (TMC) যোগদান করলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের চার সদস্য বিজেপি-র অজিত বাউরী, মানিক চাঁদ কুমার, কংগ্রেসের রাজীব সাহু, তনুশ্রী বাউরি ছাড়া এ বারের নির্বাচনে পুরুলিয়ার কংগ্রেসের প্রার্থী তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন, পুরুলিয়া শহর কংগ্রেস সভাপতি বিশ্বরূপ পট্টনায়ক, পুরুলিয়া পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার ববিতা কর্মকার, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর আরতী পাণ্ডে, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলর রাজীব দত্ত-সহ একাধিক বিজেপি ও কংগ্রেস নেতানেত্রীরা তৃণমূলে যোগ দেন। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা দলের কো অর্ডিনেটর সুজয় বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যোগদানকারীদের হাতে পতাকা তুলে দেন রাজ্যের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক।

যোগদান পর্বে মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ব্যাপক সাফল্যের কারণেই কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা ভরসা করেই দলে এসেছেন। কোনও ভয় দেখিয়ে নয়, প্ররোচনা দিয়ে নয়, নিজে থেকেই সকলে আসছেন।” প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সম্পাদক পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সঙ্গে আলাদা করে জাতীয় কংগ্রেসের তো কোনও পার্থক্য নেই। আগেও আমরা মমতাদির সঙ্গে কাজ করেছি। সিপিএম (CPIM) তো বিজেপির পার্টি হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।”

পুরুলিয়া জেলা পরিষদের চার সদস্য তৃণমূলে যোগদান করায় ৩৮টি আসনের মধ্যে ৩২টি শাসক দলের দখলে এল। যদিও দলীয় নেতাদের এভাবে তৃণমূলে চলে যাওয়া কোন প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাত। তিনি বলেন, “প্রলোভন দেখিয়ে তৃণমূল অনান্য দল থেকে নেতাদের নিয়ে আসছে। এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। জেলা পরিষদের দুই কংগ্রেস সদস্যকে সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রলোভন দেখিয়ে তৃণমূলে (TMC) নিয়ে গেছেন কারণ কয়েক দিনের মধ্যেই অনাস্থা হতে চলেছে। পুরুলিয়া জেলা পরিষদে সুজয় বাবুর দলের লোকেরাই অনাস্থা আনবে। তখন যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে পারেন তাঁর জন্যই এই প্রচেষ্টা।” তবে, এই যোগদান পর্ব নিয়ে মুখ খোলেনি কংগ্রেসের শরিক দল সিপিএম। এমনকী, জেলা বাম নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি, বিজেপি জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী তাঁদের দুই সদস্যদের তৃণমূলে যোগদান প্রসঙ্গে বলেন, “লোভে পড়ে ওরা ঘাসফুল শিবিরে গেছেন। নির্বাচনের আগেই ওঁরা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন। বিষয়টা দল তদন্তও করছিল। দলীয় বহিষ্কার এড়াতে দলত্যাগ করল।”

যদিও, তৃণমূলে এই যোগদান স্বতস্ফূর্ত বলে দাবি করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, পুরুলিয়া জেলা পরিষদে কোনও অনাস্থা আনার প্রশ্নই নেই। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সভাধিপতি পদে বহাল করেছেন। সেক্ষেত্রে দলের নির্দেশেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন, এই যোগদান পর্বে মলয় ঘটক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি গুরুপদ টুডু।

আরও পড়ুন: ‘রাজ্যপাল রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে অভিযোগ করুন’, বিস্ফোরক বনমন্ত্রী