পুরুলিয়া : বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ় মহাদেব গোপ। বাড়ি পুরুলিয়ার নাদিয়ারায়। পুকুরে স্নান করার অভ্যেস রয়েছে। আর পাঁচটা দিনের মতোই দুপুর বেলা পুকুরে স্নান করতে যাচ্ছিলেন। তখনই তাঁকে ঘিরে ধরে কয়েকটা কুকুর। তাড়া করে। ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রৌঢ়ের উপর। মহাদেব বাবুর মুখ, ঠোঁট, গাল, নাক খুবলে নেয়। সে এক বীভৎস অবস্থা। প্রৌঢ়ের ডানদিকের গাল ও নাকের মাংস ভয়ঙ্কর ভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এরপর আশেপাশের কয়েকজন মিলে তাঁকে উদ্ধার করেন। দেরি না করে তাঁকে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তি করা সার্জারি বিভাগে। প্রৌঢ়ের মুখের অবস্থা দেখে শিউরে ওঠেন সকলে। অসম্ভব যন্ত্রণা ও সেই সঙ্গে প্রচুর রক্তক্ষরণ। রোগীর অবস্থা তখন মৃতপ্রায়।
এমন ভয়ঙ্কর ক্ষত দেখে তাঁকে সার্জারি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় নাক কান গলা বিভাগে। সেখানকার বিভাগীয় প্রধান অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর চিকিৎসক অতীশ হালদার জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক মনোজ খান এবং চিকিৎসক বুবাই মণ্ডলকে নিয়ে একটি সার্জিকাল টিম তৈরি করেন। এদিকে রোগীর অবস্থা ততক্ষণে আরও খারাপ। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, গোঙাচ্ছেন। এমন অবস্থায় তাঁকে অজ্ঞান করা যাবে কি না সেও এক সংশয়ের বিষয়। নিয়ম মাফিক প্রৌঢ় মহাদেব গোপকে জলাতঙ্কের ইনজেকশন দেওয়া হয়। ক্ষতস্থানে ইমিউনোগ্লোব্যুলিনও দেওয়া হয়। এরপর কাটা জায়গাগুলিতে ইনজেকশন দিয়ে অবশ করা হয় রোগীকে। তারপর শুরু হয় বড় চ্যালেঞ্জের কাজ। শুরু হয় রোগীর ক্ষতস্থান জোড়া লাগানোর কাজ ।
যদিও কুকুরে কামড়ালে সেলাই করতে নেই। তবু ওই প্রৌঢ় এমন ভয়ঙ্করভাবে জখম ছিলেন যে রক্তপাত হয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই কারণেই অস্ত্রোপচার ও সেলাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান চিকিৎসক অতীশ হালদার। চিকিৎসক মহলের অনেকেই বলছেন, যে অস্ত্রোপচার তাঁরা করেছেন, সেটা শুধু কঠিনই নয়, অবিশ্বাস্যও বটে। পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অতীশ হালদার, চিকিৎসক মনোজ খান এবং চিকিৎসক বুবাই মণ্ডলের কর্মদক্ষতায় নতুন জীবন পেলেন মহাদেব গোপ। প্রত্যন্ত জেলার সরকারি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে এরকম কঠিন অপারেশন করে নজির গড়ল পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগ। এমনটাই মত চিকিৎসক মহলের।