
পুরুলিয়া: চলে গিয়েছে রাজপরিবারের সেই জাঁকজমক। কালের নিয়মে ম্লানও হয়েছে অনেকটা। ক্ষয়ে গিয়েছে প্রাচীণ মন্দির। কিন্তু দুর্গাপুজো বন্ধ হয়নি। বারোশো বছরের পুরনো পুরুলিয়ার হেঁসলা রাজবাড়ির পুজো আজও চলে আসছে সেই একই ভাবে।
চারদিকে উঁচু-নিচু পাহাড়। দুর্গম জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছে রাস্তা। ভাল্লুক-চিতা-নেকড়ে কী ছিল না। তার মধ্যেই ছিল দ্বিগবিজয় প্রতাপ সিংয়ের রাজপ্রাসাদ। কথিত রয়েছে সুদূর অতীতে রাজস্থানের যোধপুর থেকে দ্বিগবিজয় প্রতাপ গৃহদেবতাকে নিয়ে সপরিবারে জঙ্গলমহলে চলে আসেন।
তারপর এই হেঁসলা গ্রামের আদিবাসী মানুষদের মন জয় করে পাহাড় জঙ্গল কেটে তৈরি করেন রাজপ্রাসাদ। ধীরে-ধীরে মোট ২২ টি মৌজার দখল নেন রাজা। তৈরি করেন কাছারি,বাগানবাড়ি,নাটমন্দির,ঠাকুরদালান,ও বারটি সুবৃহৎ পুকুর।
এরপর রাজা নিজের ঠাকুরদালানে শক্তির দেবীরূপে মা দূর্গার পুজো শুরু করেন পারিবারিক একটি খড়গকে সামনে রেখে। পরবর্তী সময়ে পুরুলিয়ার প্রাচীনতম সংস্কৃতি ছৌ নাচ কে অনুকরণ করে দেবী দূর্গার মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু হয়।
এই গ্রামেরই পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে পাহাড়ি হেঁসলা নদী। সেই ঝর্ণা থেকে ঘটের জল আনা হয়। সেই সময় ঘটা করে শঙ্খ-ঢাক বাজিয়ে বন্দুকের গুলি চালিয়ে হেঁসলা নদীতে ডুব দিয়ে রাজা নিজে জল আনতেন। এখনো সেই প্রথা অনুসরণ করে জল আনা হয়। তবে বন্দুকের পরিরর্তে এখন শব্দ বাজি ফাটানোর চল রয়েছে।
রাজ আমলে ষষ্টি থেকে দশমী পর্যন্ত চলত ছাগল ও মোষ বলি। বর্তমানে তা বন্ধ হয়েছে। সেইদিনের সেই রাজা কিংবা তাঁর রাজত্ব রাজতন্ত্র বর্তমানে আর নেই। শুধু পড়ে আছে জরাজীর্ণ রাজপ্রাসাদ,কাছারিবাড়ি ,নাটমন্দির,ঠাকুরমন্দির ও পুকুর। এই রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম রাজা কুন্দর্পনারায়ণ সিংহ দে এখনও পুজো পরিচালনা করেন। গ্রামের মানুষ এই পুজোয় পাশে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আগে খুব ধুমধামের সঙ্গে পুজো হত। এখন হয় না। লোক বল কম তাই এখন আর সেভাবে করা হয় না।”