পুরুলিয়া : পুরুলিয়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ‘খুন’ কংগ্রেস নেতা। ঝালদা পুরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপন কান্দুকে লক্ষ্য করে গুলি করে একদল দুস্কৃতী। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। অসমর্থিত সূত্রে খবর, তাঁর ঘাড়েও গুলি লেগে থাকতে পারে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জখম গুরুতর হওয়ার সেখান থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাঁচিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝালদা বাঘমুণ্ডী রোড ধরে তিনি সান্ধ্য ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎই বাইকে করে কয়েকজন দুস্কৃতী এসে তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনার জেরে আগামী মঙ্গলবার সারা পুরুলিয়া জেলা জুড়ে বন্ধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাউন্সিলরকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা এলাকা থেকে চম্পট দেওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তাতেই পড়ে ছিলেন তপন কান্দু। পরে স্থানীয়রা তাঁকে দেখতে পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। উল্লেখ্য এবারের পুর নির্বাচনে ঝালদা পুরসভা ত্রিশঙ্কু হয়ে যায়। মোট ১২ টি আসনের মধ্যে পাঁচটি পায় তৃণমূল এবং পাঁচটি আসন যায় কংগ্রেসের ঝুলিতে। বাকি দু’টি আসন যায় নির্দলদের দখলে। তাদের মধ্যে এক নির্দল প্রার্থী অবশ্য পরবর্তী সময়ে তৃণমূলে যোগ দেয়। তবু ঝালদা পুরসভায় বোর্ড গড়াকে কেন্দ্র করে জটিলতা এখনও কাটেনি। এই অবস্থায় স্থানীয় কাউন্সিলরকে গুলি করা নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনের ঘটনায় কংগ্রেস নেতা নেপাল মাহাতো জানিয়েছেন, “আমার মনে হচ্ছে এটি একটি রাজনৈতিক চক্রান্ত এবং এক বিশাল ষড়যন্ত্র। কারণ বোর্ড গঠনে সমান সমান হয়ে গিয়েছে। আমাদের দিকেও একজন নির্দল সমর্থন জানিয়েছে। এমন হত্যাকাণ্ড ঝালদায় আগে কোনওদিন হয়নি। আজ তাঁকে পুরুলিয়া পার্টি অফিসে সংবর্ধনা দেওয়া হল। তারপর তিনি বাড়ি গেলেন। বাড়ি গিয়ে সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়েছিলেন, সেই সময় এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছে সবাইকে ধমক দিয়ে তৃণমূল করানোর জন্য।”
ঘটনার পর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। বিজেপি সাংসদ জানিয়েছেন, “আমি নিজের এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছিলাম। আমি শুনতে পাই ঝালদায় এক স্থানীয় কাউন্সিলর ও বর্ষীয়ান নেতা সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। সেই সময় গোকুলনগর নামে এক গ্রামের কাছে তাঁকে গুলি করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার যা পরিস্থিতি, তা দুর্ভাগ্যজনক। কোথাও না কোথাও এই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে। ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং অভিযোগ করছেন, তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে রোজ সুপারি কিলার যাতায়াত করছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসন বলে কিছু নেই। এখানে তালিবানি শাসন চলছে। ঝালদার আইসি সঞ্জীব ঘোষের বিরুদ্ধে এখনই এফআইআর হওয়া উচিত। আমার সন্দেহ এই গুলিকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি তাঁর যোগ রয়েছে। তিনি যতক্ষণ এখানে থাকবেন, ততক্ষণ কোনও তদন্ত করা সম্ভব না। প্রথমেই ৩০২ ধারায় মামলা হওয়া দরকার।”
সেই সঙ্গে সাংসদ আরও অভিযোগ করেন, “আমার কাছে খবর আছে, ঘটনাস্থলের ১৫০-২০০ মিটার দূরেই পুলিশের গাড়ি ছিল। তার মধ্যেই কেউ গুলি মেরে দিল। তাও আবার ঝালদা শহর থেকে মাত্র দেড় দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্ঞাতসারেই এইসব হচ্ছে। তিনি চান না বিরোধীরা থাকুক।” তবে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন : By Election2022: শত্রুঘ্নর সমর্থনে দেওয়াল লেখা শুরু, বিরোধীরাও নামুক, বলছে আসানসোলবাসীই