Purulia School: এই স্কুলে ১৮০ পড়ুয়া, এক জন শিক্ষক – কীভাবে পড়াশুনা হয় অঙ্ক কষে বলুন তো?

Purulia School: অসহায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ বারিকের। স্কুল ছেড়ে কোথাও তিনি যেতে পারেন না। অদ্ভুত একটা মায়া পড়ে গিয়েছে এই স্কুলের ওপর ।তাই জন্মলগ্ন থেকে শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও স্কুল ছেড়ে চলে যাননি। বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছেন শিক্ষকের জন্য। কিন্তু আজ অবধি কোনও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।

Purulia School: এই স্কুলে  ১৮০ পড়ুয়া, এক জন শিক্ষক - কীভাবে পড়াশুনা হয় অঙ্ক কষে বলুন তো?
১৮০ জন ছাত্র, একা শিক্ষক (ইনসেটে প্রধান শিক্ষক)Image Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Feb 05, 2025 | 2:31 PM

পুরুলিয়া: রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা, গ্রামের স্কুলগুলোর দুরবস্থা নিয়ে একাধিক খবর সামনে এসেছে। এবার আলোচনায় পুরুলিয়া বাঘমুন্ডির তেলিয়াভাসা জুনিয়র হাই স্কুল। স্কুলের বয়স ১৫ বছর। শিক্ষকের সংখ্যা এক। কিন্তু সেই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কত জানেন? ১৮০ জন। হ্যাঁ, এই একজন শিক্ষকই ক্লাস করান তাদের। ২০২৩ সাল থেকে চালু আছে হস্টেল। আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৭৫। ৯৫ শতাংশ তফসিলি উপজাতি পড়ুয়ার যে স্কুল- সেই স্কুলের জন্মের পর থেকে দ্বিতীয় কোন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। হস্টেলের যারা কর্মচারী তারাই নিজেদের এলাকার স্বার্থে ক্লাসে এসে নিয়মিত ক্লাস নেন।

রাজ্যে এমন একাধিক স্কুল রয়েছে, যেখানে কেবল শিক্ষকের অভাবেই পড়ুায়ারা স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। সেখানে দাঁড়িয়ে এই স্কুল সত্যিই ব্যতিক্রমী। জেলা শিক্ষা দফতরের দাবি, এই মুহূর্তে শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব নয়। সম্ভব শুধু অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা। সেটাই বা করবে কে!

পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে প্রত্যন্ত এলাকার এক তেলিয়াভাসা। সেই গ্রামেই ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তেলিয়াভাসা জুনিয়র হাই স্কুল। ২০১১ সালে চালু হয়েছিল বিদ্যালয়। এলাকার ছোট ছোট শিশুদের স্বার্থে তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিক্ষা প্রেমী মহানন্দ মুর্মু বিদ্যালয়ের জন্য দু’বিঘা জমি দান করেছিলেন। সেই জমিতেই বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের বর্তমান দশা দেখে হতাশ সেই জমিদাতা। তিনি বলেন, “আমি একা একটা প্রাইমারি স্কুল তৈরি করেছিলাম। প্রথমে এসআই-এর তরফ থেকে বলা হয়েছিল স্কুল করতে চাইলে ১৪ ডেসিমেল জায়গা দিতে হবে। গ্রামে মিটিং হয়, তখন ঠিক হয় ১৪ ডেসিমেল জায়গাতে তো বেশি কিছু হবে না। তখন ঠিক হল একেবারে ২ বিঘা জমিই দেওয়া হবে। তখন আমিই বলেছিলাম, আমিই জমি দিয়ে দেব।”

বিদ্যালয় যেদিন থেকে চালু হয়েছিল সেদিন থেকে একজন শিক্ষককে দিয়েই চলছে বিদ্যালয় । ২০২৩ সালে হোস্টেল চালু হয়। ছাত্ররাই সেখানে থাকতে পারে। হস্টেলে আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৭৫ জন। সেখানে ছয় জন হোস্টেল কর্মচারী আছেন। তাদের বেতন কারুর দু হাজার পঁচিশ টাকা, কারর ৩৩৩০ টাকা। নিজেদের কাজ করে তাঁরা বিদ্যালয়ের স্বার্থে ক্লাসে এসে নিয়মিত ক্লাস নেন। ওই টাকায় সংসার চলে না। কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে মানুষ করার চিন্তাতে তাঁরা মেনে নিয়েছেন সবকিছু। হস্টেলের কর্মচারী চক্রধর সরেন বলেন, “এখানে আসলে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তাই ক্লাস নিই। কারণ না হলে আমাদের ছেলেমেয়েরাই এখানে পড়াশোনা করতে পারবে না। আমরা ২৪ ঘণ্টাই থাকি এখানে। চাই স্কুলটাই একটু ভালভাবে চলুক।”

অসহায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ বারিকের। স্কুল ছেড়ে কোথাও তিনি যেতে পারেন না। অদ্ভুত একটা মায়া পড়ে গিয়েছে এই স্কুলের ওপর ।তাই জন্মলগ্ন থেকে শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও স্কুল ছেড়ে চলে যাননি। বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েছেন শিক্ষকের জন্য। কিন্তু আজ অবধি কোনও স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ বারিক বলেন, “২০১১ সাল থেকে এখানে আছি। ছাত্র রয়েছে ১৮০ জন। স্থায়ী শিক্ষক আমি একাই। প্রথম থেকে আর কোনও নিয়োগ হয়নি। আমাদের অনলাইন পোর্টালেও আবেদন করেছি। নতুন করে যে লিস্ট হয়েছে, তাতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের স্কুলের নাম নেই। ভালবেসেই রয়ে গিয়েছি। একটা মায়াও তো রয়েছে।”

এলাকার মানুষ জানেন স্কুলের সমস্যার কথা। রাজনৈতিক নেতাদের গলাতেও হতাশার সুর। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বলেন,  “এই রাজ্যের সর্বত্র একী অবস্থা! শুধু মেলা খেলায় ব্যস্ত, শিক্ষা স্বাস্থ্য কোথায় যাচ্ছে, কোনও ধ্যান নেই, যেন তেন প্রকারে রাজনীতি করে টিকে থাকতে হবে, সবাইকে বঞ্চিত করছে অনেকদিন ধরেই নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।”

বিদ্যালয় পরিদর্শক ( মাধ্যমিক) নিজেদের দায় এড়িয়ে গিয়ে সমস্ত দায় ঠেলে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের সভাপতি তথা পরিচালন সমিতির দিকে। জেলা শিক্ষা দফতরের নাকি কিছুই করার নেই। বিদ্যালয় পরিদর্শক মহুয়া দাস বলেন, “এখন একটাই অপশন, গেস্ট টিচার দেওয়া। সেটার যদি আবেদন আসে, তাহলে ওখানে যদি কোনও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক থেকে থাকেন, তাঁকে ওই স্কুলে পাঠাতে পারি।”

জেলা শিক্ষা দপ্তরের তালিকায় তেলিয়াভাসা জুনিয়র হাই স্কুলের নাম অবশ্যই আছে। সর্বশিক্ষা মিশনের তালিকায় তেলিয়াভাসা জুনিয়র হাই স্কুলের নাম অবশ্যই আছে। শুধু শিক্ষক নিয়োগের দায় নেই জেলা শিক্ষা দফতরের। পুলিশ থেকেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সময় পেলে পুলিশকর্মীরাও সেই স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের পড়িয়ে দিয়ে আসবেন। হয়তো এভাবেই চলবে দিনের পর দিন। শিক্ষার নামে প্রহসন।