
পুরুলিয়া: ডাইনি অপবাদে এক মহিলাকে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে শাবল দিয়ে মাথায় মেরে খুনের অভিযোগ। মৃতার নাম পদবী টুডু (৩৭)। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার পাড়া থানার চাপুড়ি গ্রামে। ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে মৃতার পরিবার।
জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে কালীপুজোর জোগাড় করছিলেন নিহত পদবী টুডুর পরিবারের লোকজন। সেই সময় তাঁরই ভাসুর হিটলার টুডু ও তাঁর স্ত্রী জলেশ্বরী টুডু-সহ বেশ কয়েকজন সেখানে জড়ো হন। অভিযোগ, তাঁদের হাতে অস্ত্র ছিল। পদবী টুডুকে বাড়ি থেকে উঠোনের পাশে টেনে নিয়ে আসেন। সেখানেই তাঁকে প্রথমে মারধর করা হয়। তারপর শাবল দিয়ে পদবীর মাথায় মারেন জলেশ্বরী। পদবীকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন তাঁর পরিবারের লোকজনও।
নিহত পদবী টুডু
মাথায় শাবল দিয়ে মারায় লুটিয়ে পড়েন পদবী। তাঁকে উদ্ধার করে পাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এদিন সকালে গিয়েও দেখা যায়, ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। মৃতার স্বামী সুভাষ টুডু বলেন, “ওরা এসে আমার স্ত্রীকে ডাইনি অপবাদ দেয়। ওদের সবার হাতে অস্ত্র ছিল। আমি বললাম, ডাইনি হলে মিটিং ডাকা হোক। ওরা শুনল না। মাথায় শাবল দিয়ে মারল। আমি ওদের কঠোর শাস্তি চাই।” ধৃতদের ফাঁসির দাবি জানান তিনি।
অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার তদন্তে নেমে ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের এদিন রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। যদিও ডাইনি অপবাদে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ধৃত জলেশ্বরী টুডু। এদিন পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার সময় নির্বিকার ছিলেন তিনি। নিজের জা-কে খুনের জন্য কোনও অনুশোচনা দেখা যায়নি। খুন করার কারণ জানতে চাওয়ায় তাঁর জবাব, “ঝগড়া হচ্ছিল। সেই সময় রড দিয়ে মেরেছি। ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারিনি।”
জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে ডাক্তার নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনা আমাদের কাছে লজ্জার। আমরা এর আগে বিভিন্ন সচেতনতামূলক ক্যাম্প করেছি। তারপর এই ধরনের অপবাদ দিয়ে মারধরের ঘটনা কিছুটা কমেছিল। মৃতার পরিবারের পাশে আমরা আছি। পুলিশ প্রশাসন যেন এই ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে।”