ঝড়খালি: দারিদ্র এখানে নিত্যদিনের সঙ্গী। তার উপর, জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ! এর মধ্যেই চলে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলির জীবন-জীবিকা। জীবিকা বলতে, মাছ ধরা, মধু সংগ্রহ করা। পেটের তাগিদে বার বার তাঁদের ছুটতে হয় জঙ্গলে। বাঘের ডেরায়। প্রতি মুহূর্তে বিপদের হাতছানি। একবার বাঘে-মানুষে মুখোমুখি হলেই সর্বনাশ। গ্রামের পর গ্রাম বাঘ-বিধবায় ভর্তি। কত মানুষ যে গিয়েছে বাঘের পেটে, তার ইয়াত্তা নেই। আবারও সেই একই ঘটনা। খাড়িতে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হানায় মৃত্যু হল সুন্দরবনের এক মৎস্যজীবী। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ঘটনাটি ঘটেছে ঝড়খালির হেড়ো ভাঙা নদীর জঙ্গলে। মৃতের নাম সুশান্ত প্রামাণিক। ঝড়খালি কোস্টাল থানার পুলিশ ওই মৎস্যজীবীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
পেটের তাগিদে গতকাল ঝড়খালির চার মৎস্যজীবী কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন হেড়োভাঙা নদীর ধারে জঙ্গলে। শীতকালে এমনিতেই তাড়াতাড়ি সন্ধে নামে। তার উপর জঙ্গলের মধ্যে অন্ধকার যেন আরও তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসে। কিন্তু ঘরে যে দারিদ্র, অনটন। তাই বিপদ মাথায় নিয়েই খাড়ি থেকে জঙ্গলের ধারে নেমেছিলেন সুশান্তরা। আর সেটাই হল কাল! সন্ধের আলো-আঁধারিতে জঙ্গলের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসেছিল বাঘ। একেবারে শান্ত। নিশ্চুপ। সুশান্তরা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি। কিন্তু জঙ্গলের আড়াল থেকে তাঁদের প্রতি মুহূর্তে র্যাডারে রেখেছিল সে।
নদীর ধারে জাল বিছিয়ে কাঁকড়া ধরতে ব্যস্ত ছিলেন সুশান্ত ও তাঁর সঙ্গীরা। ততক্ষণে নিজের শিকার বেছে নিয়েছিল সুন্দরবনের ডোরাকাটা। মুহূর্তের অসতর্কতা, আর তাতেই সব শেষ। জঙ্গলের আড়াল থেকে বেরিয়ে সুশান্তের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। অন্ধকারের মধ্যে জ্বলজ্বল করছিল দুটো চোখ। আর তীব্র আর্তনাদ। চোখের পলকে ঘটে যায় গোটা ঘটনা। একেবারে নিমেষে মধ্যে। মুহূর্তের আকষ্মিকতা কাটিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাকি তিন মৎস্যজীবী আপ্রাণ চেষ্টা করেন বাঘের মুখ থেকে সুশান্তকে ফিরিয়ে আনতে। শেষে সফলও হন তাঁরা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। রক্তাক্ত অবস্থায় জঙ্গলের মধ্যে লুটিয়ে পড়েন সুশান্ত। বাঘ পালিয়ে যেতেই তাঁকে উদ্ধার করে ঝড়খালিতে ফিরিয়ে আনেন তাঁর সঙ্গীরা। খবর দেওয়া হয় ঝড়খালি কোস্টার থানায়। পুলিশ দেহটি শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য বাসন্তী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।