ডায়মন্ড হারবার: টিউশন পড়তে দিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মা। কথা ছিল, ছেলেকে বাড়িতে দিয়ে যাবেন শিক্ষক নিজেই। কিন্তু ঘুম ভেঙে খোঁজ করতেই মা জানতে পারেন, ছেলে ঘরে ফেরেনি। তারপরই খোঁজ শুরু। ততক্ষণে অপহরণকারীদের ডেরায় পৌঁছে গিয়েছে ৬ বছরের ইয়াসিন আখন। মধ্যরাত পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। পরে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসতেই, সেই সূত্র ধরে শিশুকে উদ্ধার করল পুলিশ। পুলিশের তৎপরতায় ওই নাবালককে ঘরে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের ঘটনা।
শিশুকে অপহরণ করে ৬০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল অপহরণকারীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ডায়মন্ড হারবারে উদ্ধার করা হয় ওই শিশুকে। এসডিপিওর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী জয়নগরের কচুয়া এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে একটি বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে শিশুকে উদ্ধার করে। ভোররাতে শিশুকে তার বাবা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন এসডিপিও মিতুন দে। পুলিশের ভূমিকায় খুশি শিশুর পরিবার সহ এলাকার বাসিন্দারা।
উস্তি থানার সংগ্রামপুর এলাকার বাসিন্দা ওই পরিবারের দাবি, টিউশন থেকে ফেরার সময় রাস্তা থেকেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই শিশুকে। ঘটনায় এক মহিলা সহ তিন অপহরণকারীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত বুধবারের ঘটনা। সন্ধে নাগাদ টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরার পথে আচমকা নিখোঁজ হয়ে যায় ৬ বছরের ইয়াসিন আখন। তার বাবা আব্দুল হান্নান আখনের একটি বড় দোকান রয়েছে ওই এলাকায়। রাত বাড়লেও ছেলের সন্ধান পাননি তাঁরা। বাড়িতে না ফেরায় ছেলের খোঁজে গৃহশিক্ষকের বাড়িতে যান মা রুবাইয়া সুলতানা বিবি। তখন তাঁকে জানানো হয়, ছুটি হয়ে যাওয়ার পর ইয়াসিনকে তাঁর বাবার দোকানের কর্মচারীরা নিয়ে গিয়েছেন।
এ কথা শুনেই আকাশ যেন মাথায় ভেঙে পড়ে। সমস্ত জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোনও খোঁজ মেলেনি ইয়াসিনের। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ইয়াসিনের বাবা আব্দুল হান্নানের মোবাইলে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করেন অপহরণকারীরা। রাতেই পুলিশের দ্বারস্থ হন ইয়াসিনের পরিবার।
যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, সেই নম্বর ট্র্যাক করে অবস্থান ধরে ফেলে পুলিশ। শিশুকে জয়নগরের কচুয়া এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। সেই সূত্র ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে কচুয়া এলাকা ঘিরে ফেলে বিশাল পুলিশবাহিনী। এরপর একটি বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে শিশুকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়ার পর ওই শিশু জানায় তাকে বাইকে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল, কাঁদলেই মারা হবে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে এই অপহরণের পিছনে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা বিহারের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। শিশুর বাবার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কারণে কোনও শত্রুতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে পুলিশ।