দক্ষিণ ২৪ পরগনা: অষ্টমীর সন্ধ্যায় মেয়েকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন। প্যান্ডেলের ভিড় পেরিয়ে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় এসেছিলেন বছর চল্লিশের গৃহবধূ। আচমকাই পিছন থেকে কী যেন একটা গলার ওপর কেউ চালিয়ে দিয়েছিলেন! মেয়ের হাতটা ছেড়ে মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকেন গৃহবধূ। ফিনকি দিয়ে বের হতে থাকে রক্ত। মেয়ের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। দেখতে পান এক ব্যক্তি পালাচ্ছেন। তাড়া করতেই কিছুটা দূর গিয়ে দেখা গেল, তিনিও হঠ করে মাটিতে পড়ে গেলেন। রক্ত বের হচ্ছে তাঁর গলা দিয়েও। ধারাল অস্ত্র নিয়ে প্রেমিকার গলার নলি কেটে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পরে তাড়া খেয়ে নিজের গলার নলি কেটেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। সোমবার রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ডায়মন্ড হারবারের পরাগ পাম্পের কাছে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে। রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, আহত মহিলার নাম তনুশ্রী হালদার (৪০)। তিনি কাকদ্বীপের হারুডপয়েন্ট উপকূল থানার ভূতমল্লার পোলের বাসিন্দা। অন্যদিকে অভিযুক্তের নাম নবকুমার মণ্ডল (৫০)। তিনি রায়দিঘির নারায়ণতলার বাসিন্দা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের খবর, তনুশ্রী বেশ কিছুদিন আগে কলকাতার বাঘাযতীন পরিচারিকার কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় গাড়ি চালক নবকুমারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এমনকি তনুশ্রী নিজের স্বামী ও দুই সন্তানকে ছেড়ে দীর্ঘদিন নবকুমারের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। গত কয়েক সপ্তাহ আগে নবকুমারকে ছেড়ে তনুশ্রী ফিরে আসেন স্বামীর কাছে। এরপর থেকে তনুশ্রীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন নবকুমার। বারবার তাঁকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু সংসার ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না তনুশ্রী। এরই মাঝে অষ্টমীর সন্ধ্যায় নিজের মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন তনুশ্রী। প্রথমে কুলপির করঞ্জলি এলাকায় ঠাকুর দেখেন মা ও মেয়ে। এরপর তাঁরা আসেন ডায়মন্ড হারবারে।
অভিযোগ, আগে থেকেই তনুশ্রী ও তাঁর মেয়ের গতিবিধির উপর নজর রেখেছিল নবকুমার। রাত ৯টা ডায়মন্ড হারবারে ঠাকুর দেখার পর বাড়ি ফেরার জন্য পরাগ পেট্রোল পাম্পের কাছে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি ধরার সময় আচমকা অস্ত্র দিয়ে তনুশ্রী উপর হামলা চালান নবকুমার। ঘটনাস্থলের কাছেই ছিল পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশ।
তনুশ্রীর মেয়ের চিৎকার শুনে এক ট্রাফিক কর্মী লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসতেই নিজের গলার নলি কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নবকুমার। খবর পেয়েই ডায়মন্ড হারবার থানার সাব ইন্সপেক্টর রবীন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তড়িঘড়ি দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে তনুশ্রী ও নবকুমার আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানেই চিকিৎসাধীন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।