কলকাতা: বড়দিন কেটেছে। কাল বর্ষশেষের রাত। কদিন ধরেই পার্কস্ট্রিট চত্বর জুড়ে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বের বালাই ভুলে উল্লাসে মাততে দেখা গিয়েছে কলকাতাবাসীকে। ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ। বাড়ছে উদ্বেগ। উদ্বিগ্ন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। বর্ষবরণের রাতে কী হবে, প্রশ্ন সেটাই। তবে গঙ্গাসাগর থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এই বিষয়ে। তিনি পাল্টা সাংবাদিককে প্রশ্ন করলেন. “নতুন বছর আমি কীভাবে আটকাব?” পাল্টা সাংবাদিককে বললেন, ‘নেগেটিভিটি ছড়াবেন না।’
নতুন বছরের শুরুতেই গঙ্গাসাগর মেলা। তুঙ্গে মেলার প্রস্তুতি। প্রস্তুতি পরিদর্শন ২৯, ৩০ জানুয়ারি গঙ্গাসাগরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার গঙ্গাসাগর থেকে ফিরে আসছেন তিনি। ফেরার সময় সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সাংবাদিকের তরফে প্রশ্ন করা হয়, কোভিড পরিস্থিতিতে নতুন বছর উদযাপন কীভাবে হবে? ক্লাবগুলিকে কী বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আরে আশ্চর্য! নতুন বছরকে আমি কী করে আটকাব? আশ্চর্য তো! আপনার কাগজের কী উৎসব, আপনার টিভির কী উৎসব! সবসময় নেগেটিভ খেলেন কেন?” মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “আপনারা কী ভাবেন না? কিছু হলে তো বড় বড় করে নিউজ় দেখাতে শুরু করবেন, কিন্তু সেটাকে কন্ট্রোল করতে হয় আমাদের। প্লিজ দয়া করে উত্তেজনা ছড়াবেন না। আপনাদের কাছে আমার হাতজোড় করে অনুরোধ। আপনারা দুটো কোভিডে সহযোগিতা করেছেন, আমি মিডিয়ার কাছ থেকে সহযোগিতা পজেটিভ চাইছি।”
গঙ্গাসাগরে দাঁড়িয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে। আমরা অনুরোধ করব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। মাস্ক পরতে ও স্য়ানিটাইজেশন মেনে চলতে। রিভিউ করে গোটা পরিস্থিতি টাইম টু টাইম আমরা জানাব।”
এদিকে, স্বাস্থ্য কর্তাদের তরফে দেওয়ার হয়েছে সচেতনতার বার্তা। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা বলছেন, ভয় দেখানো কিংবা আতঙ্কিত করার জন্য নয়, কিন্তু বেশ কিছু তথ্য সামনে এসেছে, যা সচেতন হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
উঠে আসা কয়েকটি বিস্ফোরক তথ্য
প্রথম তথ্য.. তৃতীয় ঢেউ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে। এমনটাই আশঙ্কা করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্য স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের বিশ্লেষণ, প্রত্যেকদিন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সংক্রমণ। সংক্রমণের গ্রাফচিত্র ক্রমেই উর্ধ্বমুখী।
দ্বিতীয় তথ্য… কলকাতায় গোষ্ঠী সংক্রমণের ইঙ্গিত স্পষ্ট। পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের লোকাল নমুনা পরীক্ষায় ওমিক্রমণের সংক্রমণ স্পষ্ট। কলকাতায় টেস্ট ও পজিটিভিটি রেট সমান হারে বাড়ছে।
তৃতীয় তথ্য… প্রথম ঢেউয়ে অক্টোবরে পিক ছিল চার হাজার। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ২০-২৫ হাজার দৈনিক সংক্রমণ আমরা দেখেছিলাম। তৃতীয় ঢেউয়ে দৈনিক সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা স্বাস্থ্য কর্তাদের।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের স্পষ্ট বার্তা, ‘কোভিড নিয়ে কথা হোক’। সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্য ভবনের আবেদন, ‘কোভিড নিয়ে কথা হোক…’ এখন যা পরিস্থিতিতে, তাতে পিকনিক, বর্ষবরণ আর কিচ্ছু নয়, শুধু কথা হোক কোভিড নিয়েই! হাতে সময় এক সপ্তাহ। দৈনিক যদি ৩০-৩৫ হাজার সংক্রমণ হয়, তাহলে প্রস্তুতি নেওয়ার মতো সময়ই নেই রাজ্যের হাতে। যুব্ধকালীন তৎপরতায় হাসপাতাল, সেফ হোমগুলিকে তৈরি থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিকদেরও প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য়ভবন।
আরও পড়ুন: ‘গঙ্গাসাগর নিয়ে আপনার অত কৌতুহল কীসের? মেলা পাবলিক কা হ্যায়’, সাংবাদিকের ওপর চটলেন মুখ্যমন্ত্রী