দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দুদিনের মধ্যে নির্দল থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া বিক্ষুব্ধ তৃণমূলরা ফিরে না এলে দল তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে। মঙ্গলবার নরেন্দ্রপুরের জয়হিন্দ অডিটোরিয়াম থেকে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল নেতা অরুপ বিশ্বাস (Arup Biswas)। রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার পৌর নির্বাচনে চারজনের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৩৫টি ওয়ার্ডের ৩৫ জন প্রার্থীকে নিয়ে মঙ্গলবার একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কুণাল ঘোষ, শুভাশিস চক্রবর্তী, শওকত মোল্লা-সহ দুই বিধায়কও এদিন উপস্থিত ছিলেন এদিনের আলোচনায়।
বৈঠক শেষে অরূপ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যে সকল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা নির্দল হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তাঁদের দুই দিনের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হবে। যদি তাঁরা তা না করেন তবে দল সেই সকল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। বস্তুত, পুরভোটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই জেলায় জেলায় বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে। কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে, কোথাও মিছিল করে যেভাবে প্রতিরোধের ছবি সামনে এসেছে, তাতে স্পষ্ট হয়েছে শাসকদলের কোন্দল।
কিছুদিন আগেই সাংবাদিক বৈঠক করে নির্দলদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নির্দলদের ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূলের নব মনোনীত জাতীয় কর্মসমিতির এই নেতা।
পার্থর কথায়, “আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পুরসভার যে নির্বাচনগুলো সেই নির্বাচনে আমরা দলের তরফ থেকে জেলার মাধ্যমে যে তালিকা পাঠিয়েছিলাম এবং যাঁরা সর্বভারতীয় তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে লড়াই করছেন, তাঁরা ছাড়া যাঁরা নির্দল হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের আমরা অনুরোধ করেছি নাম প্রত্যাহার করার জন্য। আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। আবার বলছি, আজকে থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে দলের প্রার্থীর সমর্থনে তাঁরা আবেদন জানাবেন। যদি তাঁরা আবেদন না জানান, সেই সমস্ত দলীয় চিহ্নিত কর্মী বা নেতা যাঁরা নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন বা তাঁদের আত্মীয়রা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা ৪৮ ঘণ্টা পর আমরা নেব।” এক্ষেত্রে কো-অর্ডিনেটরদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে বলে জানান পার্থ।
১০৮টি পুরসভার মধ্যে ১০৭টি পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরই অস্বস্তিতে পড়তে হয় তৃণমূলকে। অভিযোগ ওঠে, দলের ওয়েবসাইটে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, আর জেলায় জেলায় যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, তাতে বিস্তর ফারাক রয়েছে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান দলীয় কর্মী, সমর্থকরা। শুধু তাই নয়, মদন মিত্রের মতো দলের ‘হেভিওয়েট’ নেতাও প্রকাশ্যে সরব হন এই প্রার্থী তালিকা নিয়ে। নানান বিস্ফোরক অভিযোগ করেন দলীয় নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি, বিতর্কিত প্রথম প্রার্থী তালিকাটি তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে রয়েছেন অরূপই। তাই ‘নির্দল-কাঁটা’ নিয়ে এ বার কার্যত, অরূপের মন্তব্যেও একই হুঁশিয়ারি শোনা গেল।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Sandhya Mukherjee’s Death: ‘দুর্ভাগ্যের বিদায়, শেষজীবনেও রাজনীতির শিকার হলেন সন্ধ্যা’