
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে ফের মৃত্যু বাংলার এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মৃতের নাম সুজিত জানা। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সাগরের মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকায়। বছর একুশের ওই যুবক পেটের তাগিদে গুজরাটে গিয়েছেন কাজ করতে। সেখানে সুরাটের মুন্দ্রা বন্দরে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতেন সুজিত। অভাবে তাড়নায় ভিন রাজ্যে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হল না তরতাজা ওই যুবকের। মঙ্গলবার সকালেই বন্দরে কাজ করার সময় মৃত্যু হয় যুবকের। শুক্রবার মহেন্দ্রগঞ্জের বাড়িতে দেহ ফিরেছে। যুবকের হঠাৎ মৃত্যু ঘিরে পরিবার-পরিজনদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা।
জানা যাচ্ছে, সুজিতের বাবা বিশেষভাবে সক্ষম। বাড়িতে বাবা-মা ও দাদারা রয়েছেন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য বলতে সুজিতই। দারিদ্র-অভাব তাঁদের পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। হঠাৎ করে এমন ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন বাড়ির লোকেরা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁরা। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেই পেটের তাগিদে পাড়ি দিয়েছিল ভিন রাজ্যে। গুজরাটের সুরাটে মুন্দ্রা বন্দরে শ্রমিকের কাজ করত। আর এরই মধ্যে অঘটন। জানা যাচ্ছে, আর পাঁচটা দিনের মতো মঙ্গলবার সকালে বন্দরে কাজ চলছিল। সুজিতও ছিলেন সেখানে। তখনই দুর্ঘটনাবশত একটি ক্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে সুজিতের, তাতেই মৃত্যু হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই পরিযায়ী শ্রমিকের। শুক্রবার সন্ধেয় সাগরের মহেন্দ্রগঞ্জের বাড়িতে ফেরে যুবকের দেহ।
বিগত কিছুদিনে রাজ্যের একাধিক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে। কিছুদিন আগেই মিজোরামে কাজে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল মালদায় ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মালদার অপর এক পরিযায়ী শ্রমিক প্রাণ হারান অসমে কাজ করতে গিয়ে। আর এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক যুবকের মৃত্যু হল গুজরাটে কাজ করতে গিয়ে।
রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কিছুদিন আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকরা বেশি টাকা পাওয়ার জন্য বাইরে যাচ্ছেন কাজ করতে। আর ফিরছেন মৃতদেহ হয়ে।’ বাইরের রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার কী দরকার, তা নিয়েও প্রশ্ন মমতার। সঙ্গে এও বলেছিলেন, অন্যান্য রাজ্যের শ্রমিকরা যখন বাংলায় কাজ করতে আসেন, তখন তাঁদের সবরকম খেয়াল রাখে রাজ্য সরকার। কিন্তু এ রাজ্য থেকে শ্রমিকরা যখন বেশি টাকা পাওয়ার আশায় ভিনরাজ্যে কাজে যান, তখন, তাঁদের মৃতদেহ হয়ে ফিরে আসতে হয়।
প্রসঙ্গত, ওই নিহত যুবকের পরিবারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ তথা রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম। পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।