Sundarban Royal Bengal Tiger: ক্যামেরাবন্দি দক্ষিণ রায়, সুন্দরবনে শেষ আদমসুমারি
Sundarban: প্রতিবছরই সুন্দরবনের বাঘ গণনার কাজ করে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বন বিভাগ। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এই ক্যামেরা খুলে ফেলার পর ১৩৬ জোড়া ক্যামেরা আবার দেওয়া হবে জেলা বনদফতরকে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সর্বশেষ বাঘসুমারিতে ভারতীয় সুন্দরবনের বাঘের (Royal Bengal Tiger) সংখ্যা ছিল ৯৬ । এ বার সেই সংখ্যা বেড়েছে কিংবা কমেছে তা জানার জন্যেই ভরসা বলতে একমাত্র ক্যামেরা। তাই ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ) নির্দেশেই ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় শুরু হয়েছিল ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের ৫৭২ গ্রিডে বিশেষ প্রযুক্তির ক্যামেরা বসানোর কাজ। তারপর একটানা ৩৫ দিন ধরেই সেই ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে সুন্দরবনের বাঘের নানান ছবি। সেই গণনার কাজ শেষ। অবশেষে শনিবার খুলে ফেলা হল ক্যামেরা।
বনদফতর সূত্রে খবর, এক একটি জায়গায় দু’টি করে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। যাতে বাঘের দুই দিক থেকে ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়। কারণ বাঘের গায়ের হলুদ কালো ডোরাকাটা দাগ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই হলুদ ও কালো ডোরাকাটা দাগই দেখেই বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে সেই ক্যামেরায় ছবি তোলার মাধ্যেম।
সম্প্রতি, সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে বাঘ চলে আসার কারণে কয়েকদিন চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিক থেকে কর্মকর্তাদের। তারপরই সুন্দরবনের ৫৭২ টি গ্রিডে লাগানো সেই সমস্ত ক্যামেরা খুলে ফেলার কাজ শেষ হল শনিবার। তবে এ বার বাঘের যে সমস্ত খাদ্য অর্থাৎ অন্যান্য জীব জন্তু কেমন আছে সেই পরিসংখ্যানও এবার এই ক্যামেরার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে যা মূলত দেশজুড়ে চার বছর অন্তর করা হয়।
তাছাড়া প্রতিবছরই সুন্দরবনের বাঘ গণনার কাজ করে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা বন বিভাগ। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এই ক্যামেরা খুলে ফেলার পর ১৩৬ জোড়া ক্যামেরা আবার দেওয়া হবে জেলা বনদফতরকে। তারপর বনবিভাগের পক্ষ থেকে সেই ক্যামেরা বাঘের জঙ্গল গুলিতে বসাবে দক্ষ কর্মীরাই। নির্দিষ্ট সময়ের পর আবার সেখানকার ক্যামেরা খুলে সেগুলো সমস্ত পাঠানো হবে ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়াতে। সেখানেই উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে এবং সর্বশেষ সেই রিপোর্ট পৌঁছে যাবে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির কাছে। শেষে জানা যাবে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা কতটা বেড়েছে এবং তার খাবারের কোন ঘাটতি আছে কিনা।
বনমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
কিছুদিন আগেই বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছিলেন বাঘের সংখ্যা নির্ধারণে তাদের গলায় রেডিয়াম কলারও পরানো হবে। বনমন্ত্রীর কথায়, “কিছুদিন ধরেই সুন্দরবনে বাঘের দেখা মিলেছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে ধারণা বাঘের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। তাি আমরা ঠিক করেছি, দ্রুত বাঘের সুমারির ব্যবস্থা করব। প্রত্যেক বাঘের গলায় রেডিয়াম কলার পরানো হবে। এছাড়া ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। মূলত, সুন্দরবন, বক্সা, নেওড়া ভ্যালিতে এই সুমারি চলবে।”
বারবার কেন লোকালয়ে বাঘ?
একবার নয়, বারবার। সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকছে বাঘ। এই তো বছর শেষের কয়েকদিন আগে কুলতলি হাঁফ ছেড়েছিল বাঘ বন্দি হওয়ায়। তার আগে ৬ রাত আতঙ্কে কাটিয়েছে কুলতলি। তারপর ঝড়খালিতে মিলেছিল বাঘের পায়ের ছাপ। পরে গোসাবা-সহ একাধিক জায়গায় দেখা মিলেছে বাঘের।
জঙ্গলের ভেতরে নেই পানীয় জল। ইয়াসে বাঁধ ভেঙে জঙ্গলের সমস্ত মিষ্টি জলের পিটই এখন নোনা। তৃষ্ণা মেটাতে বাধ্য হয়ে লোকালয়ে দক্ষিণ রায়। সেসব যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি, কাঠ কাটতে, মাছ ধরছে, কাঁকড়া শিকারে বাঘের ডেরায় বার বার পা পড়েছে মানুষের। ঝড়ের মুখে বুক পেতে দেওয়া সুন্দরবন ধুঁকছে। আদমসুমারি বলছে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বাঘের খাদ্য? হরিণ বনশূকরের অনুপাত কত? সে সংখ্যাই বা গুনছে কে?
প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “বাঘের হামলা বেড়েছে কারণ, মানুষ যেমন জীবিকার স্বার্থে জঙ্গলে যাচ্ছে, বাঘও পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে।” শেষ হওয়া আদমসুমারি অনুযায়ী, বাঘের সংখ্যা এখন ৯৬। কিন্তু খাদ্যের জোগান ঠিক রয়েছে তো? সাধারণত আহত হলে বা শিকার ধরতে অক্ষম হলে বাঘ লোকালয়ে হানা দেয়।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এখন খাদ্য ও জলসংকট দেখা দিয়েছে সুন্দরবনের বাঘের। প্রাক্তন মুখ্য বনপাল অতনু রাহা বলেন, “বাঘকে সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের সহায়তা না পেলে বাঘ হেরে যাবে। তাকে বাঁচাতে হবে।”
আরও পড়ুন: COVID19 in Ketugram: কোভিড-কাঁটা! সরকারি ছাড়পত্র মিললেও বন্ধ কেতুগ্রামের গঙ্গা মেলা