দক্ষিণ ২৪ পরগনা: অবশেষে খাঁচায় ধরা পড়ল সুন্দরবনের বাঘ। বুধবার ভোর ৪:৫০ মিনিট নাগাদ গোসাবার মথুরাখণ্ড গ্রাম লাগোয়া ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে পাতা খাঁচায় খাবারের লোভে ঢুকে পড়ে বাঘটি। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অনুমান, বাঘটি পূর্ণ বয়স্ক। বয়স ৮-১০ বছর হতে পারে। ইতিমধ্যেই বাঘটিকে জঙ্গল থেকে খাঁচা-সহ তোলা হয়েছে বন দফতরের বোটে । বাঘ ধরা পড়ার খবর শুনে নদীর পাড়ে খাঁচাবন্দি বাঘ দেখতে ভিড় জমান গ্রামবাসীরা। রয়েছেন আধিকারিকরাও। বোটের ওপরেই পশু চিকিৎসককে দিয়ে বাঘটির শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়।
মঙ্গলবার সকালে গোসাবার বালি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মথুরাখণ্ড বাঘের পায়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। গ্রামের নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই গ্রামবাসীদের নজরে আসে বাঘের একাধিক পায়ের ছাপl এমনকি লোকালয়ের একটি বাড়িতে এক ছাগলের দেহও উদ্ধার হয়। উল্কাগতিতে ছড়িয়ে পড়ে খবর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ ও বনকর্মীরা।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, পিরখালি জঙ্গল থেকে বাঘ বিদ্যা নদী সাঁতরে ঢুকে পড়েছে মথুরাখণ্ড গ্রামেl খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বিদ্যা রেঞ্জের বন কর্মীরা। মঙ্গলবার রাতভর চলে চেষ্টা। বুধবার ভোরে বাঘটিকে খাঁচাবন্দি করা সম্ভব হয়।
এ প্রসঙ্গে ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, “বাঘটি সুস্থ, তবে ওর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বাঘটির বেশ ভালোই বয়স রয়েছে। তার শিকার করার মতো ক্ষমতা কমে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। তারপরের পদক্ষেপটি সেই বুঝে করা হবে।”
পাশাপাশি তিনি বলেন, “১০৬ কিলোমিটার জুড়ে যে লাইলন গার্ড ফেন্সিং রয়েছে, এটা পুরো চেকিং শুরু হচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যেই। ফেন্সিং যেখানে যেখানে ছেড়া রয়েছে, সেগুলি দ্রুত সারিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” সচেতনতার জন্য প্রান্তিক গ্রামগুলিতে মাইকিং করব। আগে নেটটিকে সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বন্য প্রাণ বিশেষজ্ঞ নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, “একবার দেখছি অল্প বয়স্ক বাঘ বের হচ্ছে, একবার বয়স্ক। দুই ক্ষেত্রেই টেরিটোরিয়াল প্রবলেম হচ্ছে। কোথাও একটা সমস্যা তো হচ্ছেই। তার সঙ্গে সঙ্গে ফেন্সিং কেটে ঢুকে পড়া, তাতেও সমস্যা হচ্ছে। আমাদের বনদফতরে যা স্টাফ রয়েছে, তাতে সর্বদা সব ফেন্সিং চেক করার সম্ভব নয়। গ্রামবাসীদেরই আরও বেশি সচেতন হতে হবে।”
লোকালয়ে বাঘের হানা এখন নিত্য দিনের বিষয় হয়ে উঠেছে গোসাবায়। ঠিক দশ দিন আগেই গোসাবার গ্লাসখালি ও এমলিবাড়ি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে আতঙ্ক ছড়ায়। আশঙ্কা সত্যিও হয় গ্রামবাসীদের। চরঘেরি এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছিল বাঘটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন বনকর্মীরা। গোসাবার গ্লাসখালি ও এমলিবাড়ি গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে বাঘের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন বনকর্মীরা। ঠিক সে সময় বাঘের হামলার শিকার হন এক বিট অফিসার।
ঝোপের ভিতর থেকে বাঘটি এসে থাবা মারে তাঁর গালে। গভীর ক্ষত তৈরি হয় গালে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ঠিক তার আগের সপ্তাহের পরিস্থিতি হয় আরও জটিল। ৬ দিন ধরে বাঘবন্দির খেলার সাক্ষী ছিলেন সুন্দরবনবাসী। ডিসেম্বরের মাঝমাঝি সময়ের ঘটনা। বাঘকে ধরতে গিয়ে গত ছ’দিনে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি বনকর্মীদের।
আরও পড়ুন: বুধে বঙ্গে বৃষ্টির দামট, উধাও শীত, সপ্তাহান্তে ‘হাওয়া বদল’…কী বলছেন আবহবিদরা?