দক্ষিণ ২৪ পরগনা: পুলিশ বরাবর শাসক শিবিরের ‘দলদাস’ হয়ে কাজ করে, এমন অভিযোগ বারবারই করে এসেছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলি। এ বার সেই অভিযোগকেই কার্যত সিলমোহর দিলেন জেলার ডায়মন্ডহারবার যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল যুব কংগ্রেসের (Trinamool Youth Congress) সভাপতি অভীক মজুমদার। মুহূর্তেই ভাইরাল তাঁর ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য।
ফুটবল খেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে অভীক মজুমদার বলেন, “প্রশাসন আমাদের, বাংলার পুলিশ আমাদের। কাশিপুর থানার আইসি আমাদের,কেএলসি থানার আইসি আমাদের। যারা পেছনে পেছনে আইএসএফকে মদত দেবে, আইএসএফের হয়ে কাজ করবে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করা হবে। তাদের চিহ্নিত করা হবে। বাংলায় একজনই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।”
তৃণমূলের নেতার এ হেন মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। দলের নেতা কী করে প্রকাশ্যে এ হেন মন্তব্য করতে পারেন তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। ঘটনায় আইএসএফ নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূল বরাবরই রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস চালিয়ে আসছে। তৃণমূল নেতার মন্তব্য়ই তা স্পষ্ট করে যে কীভাবে শাসক শিবির বাংলা শাসন করছে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই পদ্মপুকুরের এই মাঠেই সভা করতে আসার কথা ছিল আইএসএফ প্রধান আব্বাস সিদ্দিকীর। কিন্তু, সেই সভা নিয়ে কার্যত পুলিশ ও আইএসএফ সমর্থকদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ভাঙড়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ থেকে শুরু করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। চলে ব্যাপক ধরপাকড়। অনুমতি ছাড়া কোভিডকালে জমায়েত করা যাবে না এমনটাই স্পষ্ট জানানো হয় প্রশাসনের পক্ষে। যদিও, পাল্টা ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী দাবি করেন, সভার অনুমতি চেয়ে পুলিশকে মেইল চিঠি দেওয়া হয়েছিল। মেইলও পাঠানো হয়েছিল।
যদিও, ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদ দাবি করেন, এই ধরনের কোনও সভার কথা তিনি জানেন না। পাশাপাশি, তাঁর আরও মন্তব্য, “ওই সভা করার জন্য় পুলিশের থেকে কোনও অনুমতি নেয়নি ভাইজানের দল। তাই সভা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
এদিকে ভাঙড়ে ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ। ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছে সংযুক্তো মোর্চা। একদা ‘লালদূর্গে’ ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে ঘাসফুল। আইএসএফ যে ভাঙড়কে ঘিরে গোটা রাজ্যে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্ঠা করেছিল ভাঙড়ের সেই গড় তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ছে। ভাঙড় বিধানসভা এলাকার পোলেরহাট ভোগালি সানপুকুর প্রাণগঞ্জ নারায়ণপুর-সহ একাধিক অঞ্চলে আইএসএফ ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছে কর্মী সমর্থকরা।
তাঁদের মনবল ফেরাতে আব্বাস সিদ্দিকি কি ভাঙড়ে সভা করা চেষ্টা করছে? উঠছে প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বিধানসভা এলাকায় ঢুকতেই পারেনি। ভাঙড়ের মাঝেরহাটে নাম মাত্র একটি ঘর ভাড়া নিলেও সেখানে তাঁকে পাওয়া যায়না। বিধায়ককে না পেয়ে দল ছাড়ছে কর্মী সমর্থকরা? উঠছে প্রশ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, আইএসএফের জন্ম হয়েছিল একেবারেই বিধানসবা নির্বাচনের প্রাক্কালে। ধর্মনিরপেক্ষের ধ্বজা ওড়ালেও কার্যত বিশেষ ধর্মকেই বরাবর ‘প্রশ্রয়’ দিয়ে এসেছে আইএসএফ এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের।
সংযুক্ত মোর্চার ক্ষেত্রে আইএসএফ-এর সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের হাত মেলানোর ফলাফল শূন্য ঝুলিতে ঘরে ফেরা, এমনটাই মনে করেছেন অনেকেই। খোদ বাম ও কংগ্রেস শিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল আইএসএফের সঙ্গে হাত মেলানো ভালভাবে নিতে পারেননি দলেরই একাংশ। তার প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। সেই সুযোগেই ক্ষমতা বাড়িয়েছে তৃণমূল। যুব তৃণমূল নেতার ভাইরাল মন্তব্য় যে ভাঙড়ের ‘পরিবর্তিত’ রাজনীতির দ্যোতক এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
দেখুন ভিডিয়ো: