কুলতলি: দশ বছরের সাংসারিক জীবন ওঁদের। কিন্তু তারপর শুরু হল অশান্তি। কারণ হিসেবে উঠে আসছে স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। ফলত সংসারে লেগেই থাকত ঝামেলা। স্ত্রীর বাপের বাড়ির অভিযোগ, তাঁদের মেয়েকে না কি এই কারণে একাধিকবার মারও খেতে হয়েছে। শেষমেশ এই সকল অশান্তির থেকে মুক্তি পেতে ওই মহিলা বেছে নিলেন চরম পথ। বাপের বাড়িতেই দুই সন্তান সহ গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আত্মঘাতী হলেন গৃহবধূ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির ঘটনা।
মৃত গৃহবধূর নাম বুল্টি মণ্ডল(২৫)। তাঁর মেয়ে মনিকা মণ্ডল (৯), ছেলে মানস মণ্ডল(৫)। পয়লাঘেরি গ্রামের বাসিন্দা বুল্টির সঙ্গে প্রায় বছর দশেক আগে বিয়ে হয়েছিল একই থানা এলাকার বিনোদপুর গ্রামের দীপক মণ্ড লের। দীপক পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। বর্তমানে ব্যাঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তিনি।
অভিযোগ, দীপক পাড়ারই এক বিবাহিত মহিলার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। আর এই খবর জানার পর থেকেই লাগাতার অশান্তি চলছিল বুল্টির সঙ্গে দীপকের। স্বামীর পরকীয়া মেনে নিতে পারেননি স্ত্রী। ফলত প্রতিবাদ করতে থাকেন তিনি। গৃহবধূর বাপের বাড়ির সদস্যদের দাবি, এর আগে তাঁরা একাধিকবার তাঁদের জামাইকে অনুরোধ করেন যাতে তাঁদের সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কোনও কিছুতেই কাজ হয়নি। জানা গিয়েছে, দীপক নাকি বুল্টিকে মারধরও করত। এইবার এই অশান্তি দীর্ঘদিনের কিন্তু শুক্রবার তা আরও বেড়ে যায়। যে কারণে বুল্টি ওইদিন রাতেই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে মহিলা চলে আসেন বাপের বাড়িতে।
এরপর শনিবার সকালে বুল্টির বাবা মহাদেব হালদার পুকুরে মাছ ধরতে যান। সেই সময় হঠাৎ তাঁর নজরে আসে ঘরের মধ্যে থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডুলি বের হচ্ছে। সঙ্গে পোড়া গন্ধ। সঙ্গে-সঙ্গে তিনি ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখেন মেয়ে ও নাতি-নাতনীরা দাও-দাও করে জ্বলছে। এরপর হন্তদন্ত হয়ে তিনি খবর দেন প্রতিবেশীদের। বাড়িতে এসে উপস্থিত হন প্রতিবেশীরাও। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। তিনজনেরই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে মৈপীঠ উপকূল থানার ওসি মধুসূদন পালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায় গিয়ে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ গুলি পাঠান হয়েছে। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হতেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে তাঁর স্বামী। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: Municipal Elections 2022: বিজেপির পতাকা পড়ে ড্রেনের ধারে, ভোটের মুখে উত্তাপ মালবাজারে