বালুরঘাট: চাকরি দেওয়ার নাম করে এক স্কুল শিক্ষক একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও চাকরি করিয়ে দিতে পারেননি তিনি। ফলে টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিত পাওনাদাররা। সোমবার রাতে পাওনাদাররা বাড়িতে এসে হুমকিও দিয়ে যায়। এরপরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ওই স্কুল শিক্ষক। দিন দুয়েক পরে একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হল তাঁর ঝুলন্ত দেহ। পাওনাদারদের চাপে পড়েই ওই স্কুল শিক্ষক আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমুন্ডি থানা এলাকায় এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিশ জানায়, মৃত স্কুল শিক্ষকের নাম মানিক চন্দ্র সরকার(৪৭)। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি থানার আকচা গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা মানিক স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি বাড়ি থেকে বেরোন। তারপর
বৃহস্পতিবার সকালে বালুরঘাট শহরের স্টেট বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার একটি হোটেল থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের অভিযোগ, চাপে পড়েই আত্মহত্যা করেছেন মানিক চন্দ্র সরকার। এর পিছনে অনেকে রয়েছে। তাদের নাম সামনে আসা উচিত। পুরো ঘটনার খতিয়ে দেখছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানিক চন্দ্র সরকার কুশমণ্ডি ব্লকের সারেঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ২০০২ সালে প্রাথমিক শিক্ষকের কাজে যোগ দেন তিনি। পরিবারে দুই মেয়ে ও স্ত্রী ছাড়াও মা রয়েছে। এলাকায় পরিচিত মুখ মানিকবাবু৷ বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেকের থেকে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ। কাউকে নার্সের চাকরি, কাউকে অন্য কোনও সরকারি চাকরি করে দেওয়ার নাম করে তিনি ১ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু, দীর্ঘদিন আগে টাকা নিলেও এখন পর্যন্ত কারও চাকরি করিয়ে দিতে পারেননি। এদিকে, চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরতের মানিকবাবুকে চাপ দিতে থাকে পাওনাদারেরা। গত সোমবার রাতে তাঁর বাড়িতে এসে টাকা চায় পাওনাদাররা এবং টাকা না পেয়ে তারা নানা হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে বালুরঘাট যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরোন মানিকবাবু৷ তারপর আর বাড়ি ফেরেননি। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে মানিকবাবুর বালুরঘাটের একটি হোটেল থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
মানিক চন্দ্র সরকারের পরিবারের অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নাম করে তিনি একা টাকা নেননি, পিছনে আরও অনেকে রয়েছে। আবার মানিকবাবুর ভাই কিতাম সরকার বলেন, “দাদার আত্মহত্যার পিছনে আরও অনেকে রয়েছে, কারণ অনেকে তাঁকে হুমকি দিচ্ছিল।” এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, স্কুল শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় শাসকদলের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা আগামীদিনে বাড়লেও আশ্চর্য হব না। চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তুলেছেন এক-একজন নেতারা। সেই টাকা দিতে না পারার জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে।”
এবিষয়ে তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর সুভাষ চাকি বলেন, “কী কারণে ওই প্রাথমিক শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন তা আগে জানা দরকার।” তাঁর পাল্টা যুক্তি, “প্রচুর উড়ো খবর ঘোরে। সবটাই কি সঠিক হয়!” তবে লিখিত অভিযোগ পেলে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে বলে বালুরঘাট থানার পুলিশ জানিয়েছে।