হুগলি: বিধানসভা নির্বাচনে লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার পর থেকেই বিজেপি (BJP) ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। সদ্যই বিজেপি ছেড়ে নিজের পুরনো দলে যোগ দিয়েছেন সপুত্র মুকুল রায়। এ বার সেই পথেই হাঁটতে চলেছেন অধুনা বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্য়োপাধ্যায় জল্পনা এমনটাই। শনিবারই তৃণমূল (TMC) রাজ্য সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বাড়িতে যান রাজীব। তারপরেই, তাঁর দলবদলে তৃণমূলে (TMC) ফেরার সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে। শনিবার, কোন্নগরে অক্সিজেন পার্লারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে রাজীবের বিরুদ্ধ ক্ষোভ উগরে দিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee) শনিবার কুণাল ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে কল্যাণ বলেন, “রাজীব-কুণাল বলছে সৌজন্য সাক্ষাৎ। ওরা কি মনে করে ওরাই বুদ্ধিমান আর আমরা সব গরু ছাগল! গত পাঁচ ছয়মাসে কোনও সৌজন্যের সাক্ষাৎ দেখা গেল না, এখন মুকুলবাবু কাল এলেন, তারপর থেকেই সৌজন্য সাক্ষাতের বন্যা বইছে।” বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা আরও বলেন, “আজকাল কে কার বন্ধু, কেই বা কার সঙ্গে লিভ টুগেদার করে তা গুলিয়ে ফেলি।” প্রসঙ্গত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee) ও কুণাল ঘোষের ‘সুসম্পর্ক’ রাজনৈতিক মহলে বরাবরই চর্চিত। রাজীবের দলত্যাগের আগে তাঁর ‘মানভঞ্জনে’ তৃণমূলের তরফে কথা বলতে গিয়েছিলেন কুণালই। কিন্তু, চিঁড়ে ভেজেনি। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতেই চলে যান রাজীব। ভোটের ফলপ্রকাশের পর সম্প্রতি বিজেপির এক হেভিওয়েট নেতা রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করার কথা বলতেই সোশ্যাল সাইটে রাজ্য সরকারের সমর্থনে একটি মন্তব্য করেন রাজীব। জল্পনার শুরু তখন থেকেই। অন্যদিকে, সম্প্রতি, বিবাহ বিতর্কে জড়িয়েছেন বসিরহাটের অভিনেত্রী সাংসদ নুসরত জাহান। তাঁর স্বামী নিখিল জৈনের সঙ্গে তিনি লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরেই, এমনই বিস্ফোরক দাবি করেন নুসরত (Nusrat Jahan)। এরপরেই রাজনৈতিক মহলে তাঁকে নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নুসরত মিথ্যাচারকে প্রশয় দিচ্ছেন এই দাবি তুলে সরব হয় বিজেপি। ফলে, রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে শাসক তৃণমূল। এই দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ দিন উষ্মা প্রকাশ করেন শ্রীরামপুরের সাংসদ আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্য়োপাধ্যায়।
তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, “রাজীব যদি দলে ফেরেন তবে আমাদের তো কিছু বলার নেই। কারণ, শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য উচ্চ নেতৃত্ব। আমাদের কী! আমাদের যা বলা হবে আমরা তাই করব। তবে এই কথাটা ঠিক অনেক কষ্ট করে আমরা ভোটে জিতেছি। রাজীবের ভ্য়ালু যে জিরো, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ইজ় আ জিরো তা আমরা প্রমাণ করে দেখিয়েছি। ওকে আমরা ডোমজুড়ে ৪৩ হাজার ভোটে হারিয়েছি। আমরা সাধারণ কর্মী। শুধু লড়াইটাই করতে জানি। দিদি বলেছিলেন দলে কোনও গদ্দারদের নেবেন না। এখন সেই গদ্দারের প্যারামিটার কতটা আমার জানা নেই। কারণ, কুণাল না জানলেও রাজীব যে দিদির সম্পর্কে কী কী কথা বলেছে তার দশ বারোটা ভিডিয়ো আমার কাছে আছে।” কল্যাণের এই আত্মশ্লাঘা নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। নিজেকে বারবার ‘কর্মী’ এবং ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য উচ্চ নেতৃত্ব’ এই সম্বোধনের মধ্য়ে দিয়ে কার্যত দলের প্রতি কিছুটা ক্ষোভই প্রকাশ করেন কল্যাণ এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের দাবি, সপুত্র মুকুল রায়ের দলে ফেরায় বিশেষ খুশি হননি তৃণমূল সাংসদ। নিজেকে কর্মীস্তরে নামিয়ে আনা এবং ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও উচ্চ নেতৃত্ব’ বলার পেছনে মুকুল রায়কেই (Mukul Roy) প্রকারান্তরে নিশানা করলেন সাংসদ। কারণ, বরাবরই সংগঠনের তদারকিতে থাকেন মুকুলই। শুধু তাই নয়, মুকুল যে ‘গদ্দার’ নন, তাঁর সার্টিফিকেট দিয়েছেন খোদ মমতা। শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, “মুকুল কখনও দলের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেনি। ও চুপ ছিল। এই জন্যই ওকে দলে নিয়েছি।” কার্যত, মমতার এই ‘শংসাপত্র’ রাজীবের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে কি না এমনই একটি অনুচ্চ, পরোক্ষ প্রশ্ন কার্যত দলের কাছে রাখেন কল্যাণ এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, শুধু কল্যাণ নন. মুকুলের প্রত্যাগমনে খুশি নন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। তিনি স্পষ্টই তাঁর হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের ‘চাণক্য’কেবলই মমতা। আর কাউকেই মানেন না তিনি। বিধানসভা নির্বাচনের পর এভাবে দলবদলুদের ফিরে আসা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ী রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর জোড়াফুলের পক্ষে থাকলেও, দলবদলু নেতাদের এভাবে ঘরে ফেরানোতে দলের আভ্যন্তরীণ সংঘাত কতটা ঠেকানো যাবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। যদিও, দলবদলকে কেন্দ্র করে সবক্ষেত্রেই ধীরে সুস্থে পদক্ষেপ করছে তৃণমূল। শুধু তাই নয়, মমতার মন্ত্রিসভা গঠন থেকে কোভিড মোকাবিলা, জনতার বিশ্বস্ততা অর্জনই এখন তৃণমূলের সরকারের মূল লক্ষ্য এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।