তৃণমূল সুপ্রিমোর সভার আগেই করোনা আক্রান্ত জলপাইগুড়ির প্রার্থী

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছেন ৪ হাজার ৮১৭জন। মঙ্গলবারের বুলেটিন অনুযায়ী অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে ২ হাজার ৫১৯ জন। যার ফলে এই মুহূর্তে রাজ্যে অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ২৯ হাজার ৫০ জন।

তৃণমূল সুপ্রিমোর সভার আগেই করোনা আক্রান্ত জলপাইগুড়ির প্রার্থী
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Apr 14, 2021 | 11:15 AM

জলপাইগুড়ি: কোভিড সংক্রমণে কাবু রাজ্য। রোজই বাড়ছে সংক্রমণ। কিন্তু, সতর্কতা নৈব নৈব চ। ভোট আবহে পাল্লা দিয়ে চলছে মিটিং-মিছিল-জনসভা। সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক, প্রচারে বেরিয়ে মুখে মাস্কও পরছেন না প্রার্থীরা। এ বার করোনার (COVID-19) কবলে পড়লেন জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ড. প্রদীপ কুমার বর্মা। মঙ্গলবার রাতে, প্রদীপবাবুর রিপোর্ট পজিটিভ আসায় শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে, একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে সে কথা জানান বিদায়ী পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব (Gautam Deb)।

ভার্চুয়াল বৈঠকে মন্ত্রী জানান, প্রদীপবাবু আপাতত হাসপাতালে আছেন। তাঁর বেশ কিছু উপসর্গ দেখা গিয়েছে। আপাতত, একান্তবাসেই আছেন তিনি। তাঁর সমস্ত প্রচার স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে প্রার্থী ছাড়াই কিছু ক্ষেত্রে প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছেন গৌতম দেব। বুধবারই, জলপাইগুড়িতে প্রদীপ বর্মার সমর্থনে সভা করতে আসছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। সিপাইদাপাড়া ময়দানে জনসভা করার কথা তাঁর। এখনও পর্যন্ত সভা স্থগিত রাখার কোনও সিদ্ধান্ত তৃণমূলের তরফে নেওয়া হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।

জলপাইগুড়িতে নির্বাচন পঞ্চম দফায়। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হাত থেকে জলপাইগুড়ি আসনটি চলে গিয়েছিল কংগ্রেসের হাতে। সে বার প্রার্থী হয়েছিলেন, ধৃতিমোহন রায়। এরপর একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের (TMC) তরফে প্রার্থী করা হয় প্রদীপ কুমার বর্মাকে। আগামী ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফার নির্বাচন। তার আগে প্রার্থীর এভাবে করোনা আক্রান্ত হওয়া নির্বাচনে যে খানিকটা প্রভাব ফেলবেই তা স্বীকার করছেন জেলা তৃণমূলের একাংশ।

উল্লেখ্য, কোভিড আবহে (COVID-19) নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই নানা বিধিনিষেধ জারি করেছিল কমিশন। রোড শো-এ জমায়েত নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য বাড়িতে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা-সহ একাধিক পদক্ষেপ করে কমিশন। অতিমারী সংক্রান্ত দূরত্ব বিধি মানতে হবে। একইরকমভাবে রোড শোয়ের ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ আরোপিত হয়। নিরাপত্তারক্ষীর গাড়ি বাদে রোড শো-এ পাঁচটির বেশি গাড়ি একসঙ্গে ব্যবহার না করা এবং ওই পাঁচটি গাড়ির একটি কনভয়ের সঙ্গে পরেরটির দূরত্ব থাকতে হবে কমপক্ষে আধ ঘণ্টার এমন নির্দেশই দিয়েছিল কমিশন (Election commission)।

রাজনৈতিক দলগুলিকে জনসভার অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে জেলাশাসকদের আরও সতর্ক হতে বলেছে কমিশন। প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রয়েছে শুধুমাত্র এমন ময়দানকেই জনসভার অনুমতি দেওয়া যাবে। ময়দানগুলি আগে থেকে চিহ্নিত করতে হবে। একাজে সংশ্লিষ্ট জেলার কোভিড নোডাল অফিসারকে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জমায়েত কখনওই যাতে নির্ধারিত মাত্রা না ছাড়ায় সেদিকে কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। পরিশেষে কমিশন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, নির্দেশ অমান্য করলে মহামারী আইনের ৫১ থেকে ৬০ নম্বর ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা খোদ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। মহামারী আইনের ওই ধারায় বিধিভঙ্গের শাস্তি হিসাবে দুই বছর পর্যন্ত কারাবাস ও সঙ্গে মোটা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু, কাকস্য পরিবেদনা!

সমস্ত বিধি নিষেধ শিকেয় তুলেই চলছে জমায়েত-সভা-সমিতি-নির্বাচনী প্রচার। এমনকী, প্রচারে স্যানিটাইজার ব্যবহার, সঠিক দূরত্ববিধি বজায় তো দূরে থাক, মাস্কই পরছেন না প্রার্থী। দাবিও তাঁদের অদ্ভুত, মাস্ক পরলে মানুষে চিনতে পারছেনা!প্রচারে গিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে করমর্দন থেকে শুরু করে শিশুদের কোলে তুলে নিয়ে জড়িয়ে ধরা সবই করছেন প্রার্থীরা। ইতিমধ্যেই, করোনা আক্রান্ত হয়ে ফিরে গিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের দুই আধিকারিক। কিন্তু, সচেতন হয়নি মানুষ।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছেন ৪ হাজার ৮১৭জন। মঙ্গলবারের বুলেটিন অনুযায়ী অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে ২ হাজার ৫১৯ জন। যার ফলে এই মুহূর্তে রাজ্যে অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ২৯ হাজার ৫০ জন। গতকালই, করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যপালদের সঙ্গে এই প্রথমবার বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। এর আগে রাজ্যপালদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। কোভিড আতঙ্কে কাঁপছে গোটা দেশ। এক দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৪৮ জন। দেশের এই উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই সব কটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী চার সপ্তাহে দেশ জুড়ে অত্যন্ত গুরুতর পরিস্থিতি। হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। দেশবাসীর সহায়তা ছাড়া অতিমারি পরিস্থিতির মোকাবিলা করা কঠিন, বলছে কেন্দ্র। বিশ্বে দৈনিক সংক্রমণের শীর্ষে ভারত। বাংলা সরকারও কড়া পদক্ষেপ করছে। ইতিমধ্যেই নবান্নে বিশেষ বৈঠকে বসেছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: সিঁদুরে মেঘ বঙ্গের ভোটে, ভাগ্য পরীক্ষার আগেই করোনা আক্রান্ত তৃণমূল প্রার্থী