সিঁদুরে মেঘ বঙ্গের ভোটে, ভাগ্য পরীক্ষার আগেই করোনা আক্রান্ত তৃণমূল প্রার্থী

নবান্নে কর্মীদের একাংশের দাবি ভোট আবহে প্রচারে ব্যস্ত থাকতেই কোভিড নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সিঁদুরে মেঘ বঙ্গের ভোটে, ভাগ্য পরীক্ষার আগেই করোনা আক্রান্ত তৃণমূল প্রার্থী
করোনা আক্রান্ত কল্পনা, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 03, 2021 | 4:57 PM

দক্ষিণ দিনাজপুর: একদিকে নির্বাচন অন্যদিকে করোনা। ভোট আবহে সমস্ত সতর্কতা বিধি নিষেধ শিকেয় তুলেই চলছে সভা-সমিতি জমায়েত। এ বার, করোনার কবলে পড়লেন তপন বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল (TMC) প্রার্থী কল্পনা কিস্কু (Kalpana Kisku)। শনিবার সকালে, সাংবাদিক সম্মেলন করে কল্পনার করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান রাজ্যসভার সংসদ তথা তৃণমূল (TMC) নেত্রী অর্পিতা ঘোষ।

সাংবাদিক সম্মেলনে অর্পিতা জানান, কিছুদিন ধরেই উপসর্গ দেখা গিয়েছিল কল্পনার (Kalpana Kisku)। পরীক্ষা করানোর পর গতকাল শুক্রবার তাঁর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে। আপাতত একান্তবাসেই আছেন প্রার্থী কল্পনা। আপাতত কল্পনাকে ছাড়াই প্রচার চলবে বলে জানানো হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। বিগত এক সপ্তাহ কল্পনার আশেপাশে যাঁরা ছিলেন তাঁদের সকলকে কোভিড পরীক্ষার করানোর নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল (TMC) জেলা নেতৃত্ব। কোভিড পরীক্ষা করাবেন স্বয়ং অর্পিতা ঘোষ ও জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব মিত্র। এ দিকে আগামী ৫ এপ্রিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা কল্পনার। সেই ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করা হবে তা জেলা শাসকের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।

নির্বাচনের ঠিক আগে এইভাবে প্রার্থীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জেরে ভোট ব্যাঙ্কে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে বলেই মনে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। এর আগে দুইবার তপনে জয়লাভ করেছে ঘাসফুল। যদিও, তৃণমূল নেত্রী অর্পিতা ঘোষ জানিয়েছেন সব কিছু মোকাবিলা করেই জয়যুক্ত হবে তৃণমূল।

প্রসঙ্গত, কোভিড আবহে (COVID-19) নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই নানা বিধিনিষেধ জারি করেছিল কমিশন। রোড শো-এ জমায়েত নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য বাড়িতে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা-সহ একাধিক পদক্ষেপ করে কমিশন। অতিমারী সংক্রান্ত দূরত্ব বিধি মানতে হবে। একইরকমভাবে রোড শোয়ের ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ আরোপিত হয়। নিরাপত্তারক্ষীর গাড়ি বাদে রোড শো-এ পাঁচটির বেশি গাড়ি একসঙ্গে ব্যবহার না করা এবং ওই পাঁচটি গাড়ির একটি কনভয়ের সঙ্গে পরেরটির দূরত্ব থাকতে হবে কমপক্ষে আধ ঘণ্টার এমন নির্দেশই দিয়েছিল কমিশন।

রাজনৈতিক দলগুলিকে জনসভার অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে জেলাশাসকদের আরও সতর্ক হতে বলেছে কমিশন। প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রয়েছে শুধুমাত্র এমন ময়দানকেই জনসভার অনুমতি দেওয়া যাবে। ময়দানগুলি আগে থেকে চিহ্নিত করতে হবে। একাজে সংশ্লিষ্ট জেলার কোভিড নোডাল অফিসারকে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি জমায়েত কখনওই যাতে নির্ধারিত মাত্রা না ছাড়ায় সেদিকে কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে। পরিশেষে কমিশন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, নির্দেশ অমান্য করলে মহামারী আইনের ৫১ থেকে ৬০ নম্বর ধারায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা খোদ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। মহামারী আইনের ওই ধারায় বিধিভঙ্গের শাস্তি হিসাবে দুই বছর পর্যন্ত কারাবাস ও সঙ্গে মোটা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু, কাকস্য পরিবেদনা!

সমস্ত বিধি নিষেধ শিকেয় তুলেই চলছে জমায়েত-সভা-সমিতি-নির্বাচনী প্রচার। এমনকী, প্রচারে স্যানিটাইজার ব্যবহার, সঠিক দূরত্ববিধি বজায় তো দূরে থাক, মাস্কই পরছেন না প্রার্থী। দাবিও তাঁদের অদ্ভুত, মাস্ক পরলে মানুষে চিনতে পারছেনা!প্রচারে গিয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে করমর্দন থেকে শুরু করে শিশুদের কোলে তুলে নিয়ে জড়িয়ে ধরা সবই করছেন প্রার্থীরা। ইতিমধ্যেই, করোনা আক্রান্ত হয়ে ফিরে গিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের দুই আধিকারিক। কিন্তু, সচেতন হয়নি মানুষ।

সমগ্র দেশের পরিস্থিতির দিকে নজর করলে দেখা যাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনার গ্রাফ। দেশে আজ করোনা (COVID-19) আক্রান্তের সংখ্যা ৮৯ হাজার, মৃত ৭১৪। মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে নাইট কার্ফু। শহরভিত্তিক কার্ফু জারি হয়েছে পঞ্জাব ও গুজরাতে। কর্ণাটকেও বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেখানেও ফের লকডাউন হতে পারে এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে বাংলায় আক্রান্তের বাড়বাড়ন্ত ভোট আবহে প্রকাশ্যে না এলেও সংক্রমণ বৃদ্ধির বিপদের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। মালদহের এক চিকিৎসকের অভিযোগ, গোপন করা হচ্ছে করোনার রিপোর্ট। সরকারি রিপোর্টের ৮ গুণ বেশি আক্রান্তের সংখ্যা এমনটাই অভিযোগ জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চিঠিও দিয়েছেন ওই চিকিৎসক। শুক্রবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর যে বুলেটিন প্রকাশ করেছে, সেখানে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৭৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। কলকাতাতেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫১৩ জন, মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। সংক্রমণের নিরিখে এরপরই উত্তর ২৪ পরগনার নাম। এই জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩১ জন কোভিড পজিটিভ। সংক্রমণ বাড়ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। এখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৩ জন।

ভোট আবহে করোনার (COVID-19) দ্বিতীয় ঢেউ কীভাবে সামলাবে বাংলা তা নিয়ে চিন্তিত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। নবান্নে কর্মীদের একাংশের দাবি ভোট আবহে প্রচারে ব্যস্ত থাকতেই কোভিড নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তবে যেভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ তাতে, দ্রুত সচেতন পদক্ষেপ না করলে ফের একবার লকডাউনের মতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: ‘অমিত শাহের বড় হা, শুধু দাঙ্গা করবে, বলুন একদম হবে না’: মমতা