বাঁকুড়া: ভোটপর্ব মিটতেই ফের প্রকাশ্যে তৃণমূলের (TMC) গোষ্ঠী সংঘর্ষ। মঙ্গলবার, মেজিয়ার মোহনা গ্রামে আচমকাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এসে আক্রান্ত হন পুলিশ কর্তারা। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতেও। আহত হন তৃণমূল নেতা মনিরুল খান। ঘটনায়, মোট ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
আক্রান্ত তৃণমূল নেতা মনিরুল খানের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে মোহনারই তৃণমূল (TMC) নেতা আনিসুল খানের দীর্ঘদিনের বিবাদ। এর আগেও একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। অভিযোগ, মঙ্গলবার, গ্রামে ফেরার পর আচমকা আনিসুল খানের লোকজন লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মনিরুলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাঙচুর করে। বাধা দিতে গেলে মনিরুলের পরিবারের সদস্যকে ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আহত মনিরুলের আরও অভিযোগ, এই প্রথম নয়,এর আগেও নানা সময়ে তাঁর পরিবারের উপর নেমে এসেছে আনিসুল গোষ্ঠীর অতর্কিত আক্রমণ। এদিন, চোখের জলে ভেসে আক্রান্ত নেতা বলেন, “আমি ও আমার স্ত্রী দুজনেই তৃণমূল করি। আমার স্ত্রী গ্রামের প়ঞ্চায়েতের সদস্য। কিন্তু, আনিসুল বলে তৃণমূল সমর্থক, আদপে নয়। ও সিপিএম (CPM) করে। আজকে আমায় আর আমার স্ত্রীকে মারধর করেছে। আমার বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে ,সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে নিয়েছে। বাগান জ্বালিয়ে দিয়েছি। এর আগে আমায় মেরে গ্রামছাড়া করেছিল। আজ ওর লোকেরা রিভলবার নিয়ে এসে চড়াও হয়েছে। আমায় প্রাণে মেরে দিত। হাতে পায়ে ধরে একটুর জন্য বেঁচেছি। পুলিশকে বলেও কোনও লাভ হয়নি। ও পুলিশের স্পাই হয়ে কাজ করে।” পাল্টা আনিসুল গোষ্ঠীর দাবি, তাঁরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। তাঁরা বরাবরই তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক। মনিরুল আনিসুলকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
মেজিয়া থানার তরফে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার হামলার খবর পেয়ে মোহনা গ্রামে যান পুলিশকর্তারা। অভিযোগ, তৃণমূল নেতা আনিসুলের অনুগামীরা পুলিশের উপর অতর্কিতে হামলা করে এবম পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। আক্রান্ত মনিরুলকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মোট পনেরো জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও খোঁজ করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতা অনুপ চক্রবর্তী তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়। আমরা এখানে প্রায় ন’শো ভোটে জিতেছি। আমাদের কর্মীদের উপর সিপিএমের (CPIM) কর্মীরা আক্রমণ করেছে। আনিসুল খান তৃণমূলের নয়, সিপিএমের কর্মী। এই অশান্তিটা তৈরি করা হচ্ছে। কে কী উদ্দেশ্য়ে তৈরি করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আজ শুনলাম, তিন-চারটে থানার ওসিকে গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। এই বিষয়টা কী ঘটছে, কেনই বা ঘটছে তার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।” এই ঘটনায়, তৃণমূলকে তোপ দেগেছে পদ্ম শিবির (BJP)। স্থানীয় বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার বলেন, “তৃণমূলের এই রোগ তো অনেকদিনের। ভোটের পর সবে তো শুরু। আরও অনেক কিছু হবে।”
আরও পড়ুন: ‘আপনাকে চিঠি লিখেছিলাম, জেলাশাসককেও, উত্তর মেলেনি’, করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীকে পত্রাঘাত অধীরের