
কলকাতা: ১৯৭৮ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার প্রথম ধাপে রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। একটি বা একাধিক গ্রাম নিয়ে এই গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। এর অধীনে থাকে বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের তৃতীয় অর্থাৎ সর্বোচ্চ ধাপে থাকে জেলা পরিষদ। কোনও জেলার পঞ্চায়েত সমিতি গুলি থাকে এই জেলা পরিষদের অধীনে। গ্রাম বাংলার ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণে জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রচুর ক্ষমতা ও কাজের দায়িত্ব রয়েছে জেলা পরিষদের।
জেলা পরিষদে নির্বাচিত এবং পদাধিকার বলে হওয়া সদস্য থাকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর জেলা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে থেকে এক জন সভাধিপতি এবং এক জন সহ সভাধিপতিকে বেছে নেওয়া হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকেই সভাধিপতি নির্বাচিত হন। পদাধিকার বলে যাঁরা জেলা পরিষদের সদস্য তাঁরা এই দুই পদে নির্বাচিত হন না। জেলা পরিষদের সভাধিপতি জেলা প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। জেলা পরিষদের সভার আহ্বায়ক তিনি। সেই সভার সভাপতিত্বও করেন তিনি। জেলা পরিষদের যাবতীয় নথিপত্র সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সভাধিপতির হাতে রয়েছে। জেলা পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়দায়িত্বও পালন করতে হয় সভাধিপতিকে। এক কথায় বলা যায় জেলা পরিষদের সর্বোচ্চ কর্তা বলা যায় জেলা সভাধিপতিকে। জেলা পরিষদের কর্মীদের নিয়োগ করতে পারেন সভাধিপতি। জেলা পরিষদের বিভিন্ন সমিতির সদস্য তিনি।
গ্রাম বাংলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জেলা পরিষদে ১০টি স্থায়ী সমিতি রয়েছে। সেগুলি হল- ১) অর্থ, সংস্থা, উন্নয়ন ও পরিকল্পনা স্থায়ী সমিতি; ২) জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতি; ৩) পূর্ত ও পরিবহন স্থায়ী সমিতি; ৪) কৃষি, সেচ ও সমবায় স্থায়ী সমিতি; ৫) শিক্ষা, সংস্কৃতি, তথ্য ও ক্রীড়া স্থায়ী সমিতি; ৬) ক্ষুদ্রশিল্প, ত্রাণ ও জনকল্যাণ স্থায়ী সমিতি; ৭) বন ও ভূমি সংস্কার স্থায়ী সমিতি; ৮) মৎস্য ও প্রাণীসম্পন বিকাশ স্থায়ী সমিতি; ৯) খাদ্য ও সরবরাহ স্থায়ী সমিতি; এবং ১০) বিদ্যুত ও অচিরাচরিত শক্তি স্থায়ী সমিতি। এই সব সমিতি কৃষি-শিল্পের উন্নতি, জল সরবরাহ, সেচ, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, সমাজ উন্নয়ন এবং জনগণের উপকারে আসবে এ রকম বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
এ ছাড়াও রাজ্য সরকার কোনও বিশেষ কাজের দায়িত্ব দিতে পারে জেলা পরিষদকে। সেই নির্দেশ মতো কাজ করতে জেলা পরিষদ বাধ্য। আবর কোনও পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতকে কোনও নির্দিষ্ট কাজের ভার দিতে পারে জেলা পরিষদ। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে জেলা পরিষদ।