পান্ডুয়া: বাড়ির ভিতর থেকে প্রচন্ড চীৎকার, পুরুষ ও মহিলা কন্ঠে গোঙানির আওয়াজ! রাত ৯ টায় এমন সব শব্দ শুনেই স্বাভাবিকভাবেই চমকে যান প্রতিবেশীরা। যে যার বাড়ি থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। ধাক্কা মেরেও দরজা খোলা যায় না। পরে পুলিশ গিয়ে দরজা খুলতেই দেখা যায় ভয়ঙ্কর দৃশ্য। বঁটি হাতে মেয়েকে কোপের পর কোপ মেরে চলেছেন তন্দ্রা ঘোষ। পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন তন্দ্রার স্বামী সুবিকাশ বাবু। বর্তমানে তিনজনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক অশান্তি বলে মনে করা হলেও তদন্তে উঠে আসছে অন্য তথ্য। পুলিশের অনুমান এই ঘটনার পিছনে থাকতে পারে কালা যাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিক। পুলিশ যাওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার তন্দ্রা দেবীকে বলতে শোনা গিয়েছে ‘শয়তান দূর হ!’
পান্ডুয়ার খন্যান হোস্টেল পাড়ার ঘটনা। বৃহস্পতিবার রাতে একটি বাড়ি থেকে তিন জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পান্ডুয়া থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, ৬৫ বছর বয়সি সুবিকাশ ঘোষ ও ২৪ বছরের মেয়ে সুলগ্না ঘোষকে ধারাল বঁটি দিয়ে কোপাচ্ছিলেন তন্দ্রা ঘোষ। আহতদের উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতিবেশীরাই খবর পেয়ে পুলিশকে জানায় ঘটনার কথা। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় পুলিশ। বাবা ও মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুবিকাশ বাবুর খুড়তুতো ভাই লক্ষীকান্ত ঘোষ জানান, গন্ডগোল হচ্ছে শুনে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে তাঁরা মনে করেছিলেন বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। পরে দেখেন তাঁর দাদা আর ভাইঝিকে কুপিয়ে মারার চেষ্টা করেছেন তাঁর বৌদি মেরেছে। বাড়ির মধ্যে কোনও অশান্তি ছিল বলেই মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, বৌদির মনে হয় মানসিক কোনও সমস্যা আছে,নাহলে এই ভাবে কেউ কোপাতে পারেনা।
প্রতিবেশী জানান, তাঁরাই সুবিকাশ বাবুর আত্মীয়দের খবর দেন। আত্মীয়রা এলে তাঁরাও ঘরে ঢুকতে পারেননি। কিন্তু প্রচণ্ড চীৎকার আর গোঙানির আওয়াজ শুনতে পান। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পান্ডুয়া থানার পুলিশ গিয়ে দরজা খুলতেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে পান সকলে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা ঘর। উন্মাদের মত আচরণ করছেন তন্দ্রা। তাঁকে আটকাতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশ কর্মীদের। তিনজনকেই উদ্ধার করে প্রথমে পান্ডুয়া গ্রামীন হাসপাতালে ও সেখান থেকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অসুরের মত ক্ষমতা নিয়ে মারতে যাচ্ছিলেন তন্দ্রা। তাঁর হাত বেঁধে রাখা হয়। বর্তমানে সুবিকাশ ও তন্দ্রা ভর্তি চুঁচুড়া হাসপাতালে, সুলগ্না ভর্তি এস এস কে এম-এ। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।
হুগলি গ্রামীণের পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এই ঘটনার পিছনে যাদু টোনার মত বিষয় রয়েছে। এখনও তিনজনের সঙ্গে সে ভাবে কথা বলা সম্ভব হয়নি, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে বলে মনে করেন তিনি।
তদন্তকারীদের অনুমান এই ঘটনার পিছনে কালা যাদুর মত কিছু আছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ কর্মীরা যখন কাল তিনজনকে উদ্ধার করেন, কারও শরীরে কোনও পোশাক ছিল না তখন। দোতলার ঘরে পোশাক খোলা ছিল আর নীচের ঘরে ছিলেন তিনজনই। ঘরের মেঝেতে চাল ছড়ানো ছিল। প্রতিবেশী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, ওই বাড়িতে প্রার্থনা হত। সেই শব্দ শুনতে পেতেন তাঁরা। এ দিকে তন্দ্রার মুখ থেকে বারবার শোনা গিয়েছে, ‘শয়তান দূর হ!’ স্বামী সুবিকাশের মধ্যে শয়তান বাস করছে, এমনটাই মনে করতেন তাঁর স্ত্রীয এই প্রশ্নই সামনে আসছে।
প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন সুবিকাশ বাবু। তাঁর মেয়ে সুলগ্না খন্যান কলেজ থেকে ইংরেজির স্নাতক। তন্দ্রা দেবী গৃহবধূ। তাঁদের পরিবার নিয়ে প্রতিবেশীদের কোনও অভিযোগ নেই। তবে কেন এমন হল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না আত্মীয়-পরিজনেরা।
আরও পড়ুন : School Reopens: বেড়েছে সেকশন, শিক্ষক সংখ্যা তো একই! কোভিড-গেরোয় বাড়ছে সঙ্কট