
নিউ জার্সি: মার্কিন মুলুকে ঠাকুর্দা-ঠাকুমা এবং কাকাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক ভারতীয় ছাত্রকে। নিউ জার্সির এক অ্যাপার্টমেন্টে, একটি হ্যান্ডগান দিয়ে ৭২ বছরের দিলীপকুমার ব্রহ্মভট্ট, ৭২ বছরের বিন্দু ব্রহ্মভট্ট এবং ২৮ বছরের যশকুমার ব্রহ্মভট্টকে গুলি করে মারার অভিযোগ উঠেছে ২৩ বছরের ওম ব্রহ্মভট্টের বিরুদ্ধে। তবে, কী কারণে সে নিজের তিন আত্মীয়কে এই ভাবে হত্যা করল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ব্রহ্মভট্ট পরিবার আদতে গুজরাটের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। মাস দুই আগেই নিউ জার্সি শহরে থাকতে এসেছিল ওম ব্রহ্মভট্ট। ঠাকুর্দা-ঠাকুমা এবং কাকার সঙ্গেই থাকত সে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার তিন আত্মীয়কে গুলি করার কথা স্বীকার করেছে ওম। সে জানিয়েছে, গুলি করার সময় ঠাকুর্দা-ঠাকুমা তাদের বেডরুমে ঘুমাচ্ছিলেন। পিছনের বেডরুমে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন তাঁর কাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, নিউ জার্সি শহরের দক্ষিণ প্লেইনফিল্ড এলাকায় তাদের বাড়ি ছিল। হত্যার ঘটনাটি ঘটে, স্থানীয় সময়, সোমবার সকাল ৯টার দিকে। মিডলসেক্স কাউন্টির প্রসিকিউটরের অফিসে ফোন করে, ব্রহ্মভট্টদের এক প্রতিবেশি গুলি চলার শব্দ শুনেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। এরপর পুলিশ এসে ওই অ্যাপার্টমেন্টের ভিতর সত্তরোর্ধ্ব দম্পতি এবং তাঁদের ছেলেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পান। দিলীপকুমার এবং বিন্দুকে ঘটনাস্থলেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। যশকুমারের গায়ে বেশ কিছু গুলি লেগেছিল। তাঁকে সেই অবস্থায় নিকটবর্তী এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসা তলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ আসার সময় ওই অ্যাপার্টমেন্টেই ছিল ওম। তাকে গ্রেফতার করে মিডলসেক্স কাউন্টি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা এবং অস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিহত দিলীপকুমার ও বিন্দু ব্রহ্মভট্ট এবং যশকুমার ব্রহ্মভট্ট
পুলিশ জানিয়েছে, একটি হ্যান্ডগান দিয়ে গুলি চালিয়েছিল ওম। জেরায় ২৩ বছরের ভারতীয় ছাত্র জানিয়েছে, ওই বন্দুকটি সে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কিনেছিল। মজার বিষয় হল, হত্যার পর সে নিজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি পরিষেবা নম্বর, ৯১১-এ ফোন করে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, কে ওই ফোনকল করেছিল জিজ্ঞেস করায় ওম তাদের জানিয়েছে, সম্ভবত সে-ই ওই ফোন করেছিল। কিন্তু, কেন সে এই কাজ করল, তার কোনও জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না পুলিশ। প্রথমে তারা অনুমান করেছিল, এটা হয়তো ‘মাস শুটিং’-এর ঘটনা। অর্থাৎ, আমেরিকায় মাঝে মাঝেই দুষ্কৃতীরা যে স্কুল বা শপিং মলে ঢুকে এলোপাথারি গুলি চালায়, সেই রকম কোনও বিষয়। কিন্তু, পরে তারা এই তত্ত্ব খারিজ করে দেয়। তাই হত্যার কারণ নিয়ে এখনও রহস্য থেকে গিয়েছে।
প্রতিবেশিরা জানিয়েছেন, ব্রহ্মভট্ট পরিবার, এলাকায় তেমন পরিচিত ছিল না। কারও সঙ্গে তেমন মিশত না। এমনিতে শান্তিতেই থাকত তারা। তবে, এর আগে একবার এক গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগের তদন্তে তাদের বাড়িতে পুলিশ এসেছিল। যে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে থাকত তারা, সেখানে আরও বেশ কিছু ভারতীয় পরিবার বসবাস করে। এই ঘটনা তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটিতে বেশ কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। সেই ক্যামেরাগুলির ফুটেজ, পুলিশের তদন্তে সাহায্য করতে পারে বলে, মনে করছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, গুজরাটের আনন্দ জেলার ব্রহ্মভট্ট পরিবারের আদিবাড়ি। প্রায় ১৮ মাস আগে সেখান থেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল ওম।