
দুবাই: যাত্রী এবং ক্রু সদস্যরা সকলে উঠে পড়েছেন। পাইলট তৈরি বিমান ছাড়ার জন্য। হঠাৎ যাত্রীদের বলা হল সকলকে নীচে নেমে যেতে। তারপর, তাঁদের বমান বন্দরেই অপেক্ষা করতে হল আরও এক ঘণ্টা। কারণ? বিমানের মালপত্র রাখার জায়গায়, বাক্স থেকে বেরিয়ে এসেছে একটি ভাল্লুক! অদ্ভুত এক ঘটনার সাক্ষী হলেন ইরাকি এয়ারওয়েজের এক বিমানের যাত্রীরা। গত কয়েক মাসে, বিমানে একের পর এক বিপত্তির খবর সামনে এসেছে। কখনও বিমানে যান্ত্রিক কোনও ত্রুটি ঘটেছে, কখনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে, কখনও মদ্যপ যাত্রী অপর কোনও যাত্রীর গায়ে মূত্রত্যাগ করেছেন। কিন্তু, তাই বলে বিমানের মধ্যে বন্ধনমুক্ত হয়ে পড়ল একটি পূর্ণ বয়স্ক ভাল্লুক! এমন ঘটনা সত্যিই বিরল। এর ফলে বিমানটি যাড়তে দেরিই শুধু হয়নি, ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে গত সপ্তাহে, দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিয়ো ক্লিপের শুরুতে দেখা যাচ্ছে, মালপত্র রাখার জায়গা থেকে মুখ বাড়াচ্ছে ভাল্লুকটি। এক ব্যক্তিকে দেখা যায়, মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে। পরের অংশে দেখা গিয়েছে ষাত্রীরা ফের বিমানে নিজ নিজ আসনে বসে আছেন। টেকঅফে দেরি হওয়ার জন্য, বিমানের চালক যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাইছেন। দেরির কারণ হিসেবে তিনি জানান, মালপত্র রাখার জায়গায় একটি কাঠের বাক্সে ভাল্লুকটি রাখা ছিল। বিমানটি ছাড়ার ঠিক আগে সেটি ওই কাঠের বাক্স ভেঙে বেরিয়ে আসে। বিমানে থাকা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিমানটি দুবাই থেকে ইরাকের বাগদাদে ফিরছিল। ভাল্লুক কাণ্ডের জন্য নির্ধারিত সময়ের থেকে এক ঘণ্টার বেশি পিছিয়ে যায় বিমানটি। ভাল্লুকটি বাক্স মুক্ত হওয়ার পর, ওই অবস্থাতেই যদি বিমানটি উড়ে যেত, তাহলে বড় বিপদ ঘটতে পারত।
? The bear caused a delay in the flight
? A bear collar came out of the cargo cage on the Dubai-Baghdad flight and caused a delay in the flight. pic.twitter.com/SMpfyV3eEU
— Everything you need to know (@Everything65687) August 5, 2023
এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে ইরাকি এয়ারওয়েজ। তবে তারা দাবি করেছে, ভাল্লুকতি পালানোর ক্ষেত্রে তাদের কোনও ত্রুটি ছিল না। ভাল্লুক পরিবহনের যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন, সেই নিয়ম মেনেই ভাল্লুকটুকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বাগদাদে। ভাল্লুকটি কাঠের বাক্স থেকে বেরিয়ে পড়ার পরই, তারা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তাদের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করা হয়েছে। আমিরশাহি কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে বিশেষজ্ঞদের পাঠিয়েছিল এবং বিমান থেকে প্রাণীটিকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
প্রশ্ন উঠেছে ভাল্লুকটিকে কোথায় কী উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? ইরাকি এয়ারওয়েজের এক কর্তা জানিয়েছেন, ভাল্লুকটিকে বাগদাদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বাগদাদের এক ধনি ব্যক্তি পুষবেন বলে ওই ভাল্লুকটিকে নিয়ে আসছিলেন। তবে ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি, ইরাকি এয়ারওয়েজের কর্তা। বস্তুত, বাগদাদের ধনী বৃত্তে ইদানিং বাঘ-সিংহ-ভাল্লুকের মতো বন্য প্রাণীদের পোষ্য হিসাবে বাড়িতে রাখা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ইরাক সরকার বন্য প্রাণীদের সুরক্ষায় নতুন আইন তৈরির কথা ভাবছে। অনেক সময় ধনিদের বাড়ির ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা থেকে শহরের রাস্তায় বেরিয়ে যাচ্ছে বন্য প্রাণীগুলি। আবার অনেক সময়, বিভিন্ন রেস্তোঁরায় ভাড়া হিসেবে নিয়ে আসা হয় বন্য প্রাণীদের। এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে, নাগরিকদেরকে এই ধরনের প্রাণীদের দেখলেই তাদের খবর দিতে বলেছে বাগদাদ পুলিশ। বিমানে ভাল্লুক মুক্ত হয়ে যাওয়ার এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী।