নিউ ইয়র্ক : সোমবারই ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে এমনিতেই চিন্তিত আন্তর্জাতিক মহল। পুতিনের ইউক্রেনের পূর্বের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার পর এই সংঘাত আরও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। পশ্চিমী দেশগুলির সতর্কবানী থাকা সত্ত্বেও এহেন পদক্ষেপে চিন্তিত আন্তর্জাতিক মহল। পুতিনের এই ঘোষণা পরই জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ (UN Security Council) জরুরিকালীন বৈঠক ডাকে। সেখান উপস্থিত ছিল ভারতের প্রতিনিধিও। সেই বৈঠকে জাতিসঙ্ঘে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে যে ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয় পড়ুয়া সহ ২০০০০ জন নাগরিকদের সুরক্ষা ভারতের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণায় ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন আরও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জাতিসঙ্ঘ (United Nation) রাশিয়ার এই পদক্ষেপের কটাক্ষ করেছেন। তারপরই জরুরি ভিত্তিতে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্ত পরিষদ বৈঠক ডাকে। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে, জাতিসঙ্ঘে ভারতের প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি (TS Tirumurti) মঙ্গলবারের জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠকে বলেছেন, “রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে ইউক্রেনের সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি গভীর উদ্বেগের বিষয়। সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” ভারতের তরফে এই বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, “ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি সীমান্তবর্তী এলাকায়ও ২০,০০০ এরও বেশি ভারতীয় পড়ুয়া এবং নাগরিক বসবাস করেন। তাঁদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে।” টিএস তিরুমূর্তি জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, “প্রত্যেক দিকের আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার উপর আমরা জোর দিচ্ছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি উভয়পক্ষ থেকে সৌজন্যপূর্ণ একটি সমাধানে পৌঁছতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।” উল্লেখ্য, ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের দেশে ফিরে আসার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল ভারতীয় দূতাবাস এবং নয়া দিল্লির তরফে। সম্প্রতি টাটার অধীনে থাকা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ২২, ২৪ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে থেকে ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার কথা ছিল।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্র পরিচালিত একটি টেলিভিশনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ানদের উদ্দেশে গতকাল প্রায় এক ঘণ্টা বক্তৃতা দেন। সেইসময় তিনি ইউক্রেনের দুই বিতর্কিত অঞ্চল দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। তারপরই তাঁকে এই দুই অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীর নেতাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে দেখা যায়। এই দুই অঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরেই রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সন্ত্রাস জারি রয়েছে। সম্প্রতি বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইউক্রেনের সংঘর্ষে প্রাণও হারিয়েছেন দুই ইউক্রেন সেনা। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই দুই অঞ্চলের পূর্বদিকে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দৌরাত্ম বেশি। তাহলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবি মেলে গোটা দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কেন ঘোষণা করা হল। পশ্চিমী দেশগুলির সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার এই পদক্ষেপ যুদ্ধের ইঙ্গিত ছাড়া আর কিছুই নয়।
আরও পড়ুন : Russia-Ukraine Conflict: ইউরোপের আকাশে সংঘাতের কালো মেঘ, ইউক্রেনের দুুই অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা পুতিনের