নিউ ইয়র্ক: বুধবার (২১ জুন), রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরের উত্তর লনে তৈরি হল এক অসাধারণ মুহূর্ত। নবম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগ দিলেন শয়ে শয়ে মানুষ।সব মিলিয়ে ১৮০টিরও বেশি দেশের মানুষ এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগব্যায়াম করলেন। তৈরি হল বিশ্বরেকর্ডও। নিঃসন্দেহে এই যোগ অধিবেশনের মধ্যিমণি ছিলেন মোদী। তবে, এই মঞ্চে নজর কাড়লেন আরও একজন। মঞ্চ থেকে যিনি আসনগুলি করার নির্দেশ দিচ্ছিলেন, সেই অ্যানেলিস রিচমন্ড। তাঁর সঙ্গে মঞ্চে ছিল, ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী ছয় মার্কিন শিশুও। রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে আয়োজিত যোগ দিবসের এই এই বিশেষ অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে, অনেকেরই মনে প্রশ্ন জেগেছে, কে এই অ্যানেলিস রিচমন্ড? আসুন জেনে নেওয়া যাক –
৪৭ বছরের এই মার্কিনি মহিলা আদতে একজন পেশাদার ব্যালেরিনা, অর্থাৎ ব্যালে নৃত্যশিল্পী। সেই সঙ্গে তিনি যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। এদিন তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরের বাইরে ২৫ মিনিট ধরে যোগাসন করান। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানিয়ে, হিন্দিতে ‘নমস্তে’ বলে আসন শুরু করেন তিনি। জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জে যোগাসন করানোর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের ভারতীয় প্রতিনিধিরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
পেশাদার ব্যালেরিনা হিসেবে ১৫ বছর ধরে নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটান অপেরার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অ্যানেলিস। তিনি জানিয়েছেন, মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি প্রথম যোগব্যায়ামের সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেই সময় বিষয়টি তাঁর মোটেই পছন্দ হয়নি। মনে হয়েছিল, এ শুধু হাত-পা ছড়ানো ছাড়া কিছু না। তবে, পাঁচ বছর পর, তাঁর এই ধারণাটা আমূল বদলে গিয়েছিল। সেই সময়, অ্যানেলিস রবি শঙ্করের আর্ট অফ লিভিং-এর কথা জানতে পেরেছিলেন এবং সেখানেই তাঁর যোগাভ্যাসের শুরু। তখন থেকেই যোগের সঙ্গে প্রেম।
অ্যানেলিস জানিয়েছেন, নাচতে গিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লেগেছিল। অনেক পেশি শক্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে যোগাসন করে তাঁর সেইসব শারীরিক অসুবিধা নিরাময় হয়েছিল। এছাড়া, মঞ্চে নামার আগে যে স্নায়ুর চাপে ভুগতেন, যোগাসন করে সেই চাপও দূর হয়েছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রাণায়াম এবং অন্যান্য শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনে একইসঙ্গে তাঁর শরীর ও মনের উপকার হচ্ছে। তারপর আর যোগের দিক থেকে মুখ ফেরাননি।
মূলত যোগাসনের উপর ভিত্তি করে, ‘ক্যাম্পাস হ্যাপিনেস’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেছেন অ্যানেলিস। আমেরিকা জুড়ে ১০০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যায়। ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন মেইন-এর যোগ শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, এমআইটি, ইউপিইএনএন, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির মতো জায়গা থেকে তাঁকে ডাকা হয় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি, সংশোধনাগারে যুবদেরও যোগাসনের মাধ্যমে মূল স্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করেন অ্যানেলিস। একই সঙ্গে ভারতের প্রতি তাঁর অমোঘ ভালবাসা রয়েছে।