
ঢাকা: আর পাঁচটা দিনের মতোই কাজে গিয়েছিলেন। পরিবারের সবাই জানত, বিকেল হলেই বাড়ি চলে আসবে। এদিকে বাইরে তখন তুমুল অশান্তি। ওসমান হাদির মৃত্যুতে জ্বলছে বাংলাদেশ। ফেসবুক খুলেছিলেন। সেখানেই হঠাৎ চোখে আসে একটা ভয়ঙ্কর ভিডিয়ো। এক যুববকে অমানবিকভাবে মারছে কিছু জনতা। সেই অত্যাচার বর্ণনা করার মতো নয়। তখনও পরিবারের কেউ বুঝতে পারেননি যে যার উপরে অত্যাচার হচ্ছে, সে তাদেরই ছেলে।
বাংলাদেশে উন্মত্ত জনতার হাতে ‘খুন’ হিন্দু যুবক। ছেলে দিপু চন্দ্র দাসকে হারিয়ে অসহায় বোধ করছেন বাবা রবিলাল দাস। এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস বা তাঁর সরকার দুঃখ প্রকাশ করলেও, কেউ আশ্বাস দিতে আসেননি। কেউ কিছু বলেননি তাদের।
ফেসবুক থেকে ছেলের মৃত্যুর খবর পান রবিলাল। তিনি বলেন, “আমরা ফেসবুক থেকে প্রথম শুনি। এরপরে বহু মানুষ এটা নিয়ে কথা বলছিল। পরে একজন আমায় এসে বলে যে ওঁকে (দিপু) খুব মারধর করা হয়েছে। আধ ঘণ্টা পরে আমার কাকা এসে বলেন যে ওরা আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়েছে এবং গাছে বেঁধে রেখেছে। তারপর ওঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেয়, আগুন ধরিয়ে দেয়। ওঁর পোড়া দেহটা বাড়ির বাইরে ফেলে রেখে গিয়েছিল। পুড়ে যাওয়া মাথা ও ধড় বেঁধে রেখেছিল।”
দিপুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কারা পিটিয়ে মারল, তা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছে না পরিবারের সদস্যরা। তবে এভাবে তাঁর চলে যাওয়াও মানা যায় না। মাত্র তিন বছর আগে বিয়ে করেছিল দিপু। তাঁর দেড় বছরের সন্তানও রয়েছে। দিপুর অকাল, মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি।
দিপুর ভাই অপু চন্দ্র দাস বলেছেন, “আমার ভাই দুই বছর ধরে কোয়ালিটি সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছিল। আমার ভাইকে কী কারণে মারল জানি না। ওরা বলছে, আমার ভাই ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছে, কিন্তু তার কোনও প্রমাণ নেই। যদি এমনটি বলে থাকে, অপরাধ হয়েও থাকে, তাহলে আইনের মাধ্যমে বিচার হতে পারত। কিন্তু নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে সন্ত্রাসীরা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মেরেছে, তাদের বিচার চাই। তাঁর পরিবার কীভাবে চলবে, এ বিষয়টিও দেখতে হবে।”