Bangladesh Durga Puja: মন্দিরে ভারত-বিরোধী ব্যানার! ইউনুসের নাকের ডগায় মৌলবাদীদের আস্ফালন
Bangladesh Durga Puja: একেবারে ইউনুসের নাকের ডগায়, ঢাকা শহরে দুর্গাপুজোর বিরোধিতায় রাস্তায় নামল মৌলবাদীরা। সেখানেই থামেনি তারা। ভারতকে, বাংলাদেশের জাতীয় শত্রু বলে দাবি করেছে। তাই, বাংলাদেশি হিন্দুদেরও ভারত বিরোধিতা করতে হবে। এই জন্য মন্দিরগুলোতে ভারত-বিরোধী ব্যানার ও পূজার আলোচনায় ভারতবিরোধী স্লোগান দিতে হবে।
ঢাকা: দুর্গাপূজা যত এগিয়ে আসছে, হাসিনাহীন বাংলাদেশে ততই চাপ বাড়ছে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। এর আগেই কুলনা জেলায় মন্দির ভাঙচুর, দুর্গাপুজো কমিটিগুলির কাছে তোলা চেয়ে হুমকি চিঠি দেওয়ার মতো ঘটনা সামনে এসেছিল। এবার একেবারে ইউনুসের নাকের ডগায়, ঢাকা শহরে দুর্গাপুজোর বিরোধিতায় রাস্তায় নামল মৌলবাদীরা। তাদের দাবি, হিন্দুদের সবথেকে বড় এই উৎসব, প্রকাশ্যে উদযাপন করা যাবে না। শুধু তাই নয়, এই সময় গোটা দেশে ছুটিও দেওয়া চলবে না। তাতে নাকি দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হবে। তাদের মতে, দুর্গাপুজোকে সর্বজনীন বলে দাবি করা অন্য ধর্মকে অবমাননা করার সামিল। এমনকি, দূষণের দোহাই দিয়ে প্রতীমা বিসর্জনেরও বিরোধিতা করেছে তারা।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর), ‘ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা’ নামে একটি চরমপন্থী সংগঠন ঢাকার সেক্টর ১৩-এ মালিবাগ মোড়ে একটি সমাবেশ ডেকেছিল। সেখানে যোগ দেন চরমপন্থী সংগঠনটির কয়েকশো কর্মী-সমর্থক। দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে, মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তারা ১৬ দফা দাবি জানিয়েছে। তারই অন্যতম হল, বাংলাদেশি হিন্দুদেরও ভারত বিরোধিতা করতে হবে। কারণ, ভারতকে, বাংলাদেশের ‘জাতীয় শত্রু’ বলে মনে করে এই কট্টরপন্থী সংগঠনটি। শুধু তাই নয়, এই জন্য মন্দিরগুলোতে ভারত-বিরোধী ব্যানার ও দুর্গাপুজোর আলোচনায় ভারতবিরোধী স্লোগানও দিতে হবে বলে দাবি করেছে তারা। মন্দিরে অখণ্ড ভারত গঠনের লক্ষ্যে হিন্দু উগ্রপন্থীরা সভা করে বলেও দাবি তাদের। এই ছলে মন্দির বন্ধের দাবি জানিয়েছে তারা।
সম্প্রতি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, দুর্গাপুজোর সময় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানি করার ঘোষণা করেছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, এটা কোনও উপহার নয়। ওই মাছ রফতানি করা হচ্ছে মাত্র। ইউনুস সরকারের এই সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেছে এই কট্টরপন্থী সংগঠন। তাদের দাবি, বাংলাদেশের রফতানি নীতি অনুসারে, ইলিশ মাছ রফতানিযোগ্য নয়। কাজেই এই সিদ্ধান্তে ইউনুস সরকার সেই নীতি লঙ্ঘন করেছে। দেশের জনগণের এর জন্য সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র জনতা।
তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, রাস্তা বন্ধ করে পুজো করা চলবে না। কোনও তোড়নও নির্মাণ করা যাবে না। মন্দিরে জোরে মাইক বাজানো, যেখানে সেখানে পুজোর ব্যানার-পোস্টার লাগানো যাবে না। তাদের আরও দাবি, পুজোর সময় নাকি বাংলাদেশের মন্দিরে মন্দিরে মদ্যপান করা চলে। বাংলাদেশে মদ্যপান নিষিদ্ধ। দুর্গাপুজোর সময় মন্দিরে মদ খাওয়া চলবে না। অন্যদিকে, মুসলমানের জন্য ফরমান জারি করা হয়েছে যে, তাদের পুজোয় আর্থিক সাহায্য দেওয়া চলবে না, প্যান্ডেলে প্রবেশ করা চলবে না, পুজোর প্রসাদও তারা মুখে তুলতে পারবে না।
ক্ষমতা গ্রহণের পর মহম্মদ ইউনুস অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বারবার দাবি করেছেন, হিন্দুদের উপর হামলা কোনও ধর্মীয় কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামি লিগপন্থী হওয়ায় হামলার নিশানা হয়েছেন তাঁরা। দুদিন আগেই আমেরিকায় বসে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, ‘হিন্দুরাও আমাদের নাগরিক’ বলে, তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বার্তা দিয়েছিলেন। গত রবিবার, বাংলাদেশের পুলিশ দুর্গাপুজোয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, তার ফিরিস্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু, মৌলবাদীদের এই প্রকাশ্য আস্ফালন বলে দিচ্ছে বাস্তব ছবিটা অনেকটাই আলাদা। উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশি হিন্দুদের। ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস সত্ত্বেও আকাশে-বাতাসে রয়েছে চাপা উত্তেজনা।