Khaleda Zia Passes Away: সংসার-প্রিয়, রাজনীতি-বিমুখী! দিনাজপুরের পুতুল কীভাবে হয়ে উঠেছিলেন খালেদা জিয়া?
Bangladesh Big Breaking: ১৯৪৫ সালে ১৫ আগস্ট। জন্ম হয় খালেদা খানম পুতুলের। সেই পুতুলই পরবর্তীতে হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের রাজনীতির 'নম্বর ২'। রংপুরের দিনাজপুরের অন্তর্গত মুদিপাড়ায় জন্ম হয় তার। বাবা জনাব ইস্কান্দর ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে ওই দিনাজপুরেই পড়াশোনা। ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন খালেদা জিয়া। ওই বছরই তাঁর বিয়ে হয় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে।

ঢাকা: তাঁকে ঘিরে বিতর্ক রয়েছে, অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির কথা চিন্তা করলে, তা খালেদা জিয়া ব্যাতীত নয়। মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বড়দিনে ১৭ বছর পর ছেলে তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা। তারপর ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় প্রয়াত হলেন খালেদা জিয়া। বিএনপি সূত্রে খবর, তাঁর মৃত্য়ুর সময় পাশেই ছিলেন ছেলে তারেক। দীর্ঘ চার দশকের রাজনীতি, উত্থান-পতন, জেল যাত্রা — সব ফেলে ৮০ বছর বয়সে চলে গেলেন খালেদা জিয়া।
১৯৪৫ সালে ১৫ আগস্ট। জন্ম হয় খালেদা খানম পুতুলের। সেই পুতুলই পরবর্তীতে হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের রাজনীতির ‘নম্বর ২’। বাংলার জলপাইগুড়িতে জন্ম তাঁর। বাবা জনাব ইস্কান্দর ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও জলপাইগুড়ির ছেলে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের রংপুরের দিনাজপুরের অন্তর্গত মুদিপাড়ায় চলে যান তাঁরা। দিনাজপুরেই শুরু হয় পড়াশোনা। ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন খালেদা জিয়া। ওই বছরই তাঁর বিয়ে হয় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। বলে রাখা প্রয়োজন, বিয়ের পর নিজের স্নাতকের পড়াশোনা সেরেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, তাও আবার কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে। এই শহরের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বেশ মসৃণ সম্পর্ক ছিল। রাজনীতিতে পা রাখার পূর্বে কলকাতা আসা-যাওয়া ছিল তাঁর।
রাজনীতিতে খালেদা জিয়া
জিয়াউর রহমানের গোটা জীবনপর্বটাই রাজনৈতিক। কিন্তু তা খালেদা জিয়ার ছিল না। বলা চলে, রাজনীতি বিমুখী ছিলেন তিনি। একাংশের মতে, খালেদা জিয়া ভালবাসতেন ঘর-সংসার। দেশ-দুনিয়ার খবর রাখতেন, কিন্তু তাতে নিজে মাততেন না। তবে তাঁর জীবন হয়তো অন্য পরিকল্পনা রেখেছিল। ১৯৮১ সালের ৩০ মে। সামরিক অভ্য়ুত্থানে জিয়াউর রহমানের মৃত্যু। সেই প্রেক্ষাপটে বিপর্যস্ত বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে ব্য়াটম ধরলেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে থেকে জেনারেল এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে নামেন তিনি। এই সময়কালে নির্বাচন হয়েছিল, আওয়ামী লিগ, জামতরা তাতে অংশগ্রহণ করলেও, খালেদা জিয়া হাঁটেন বয়কটের পথে। এই রাজনৈতিক লড়াইকে পেরিয়ে খালেদা জিয়ার প্রথম সাফল্য ছিল ১৯৯১ সালের সংসদীয় নির্বাচন। একক সংখ্য়াগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা বিএনপি, খালেদা জিয়া হন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে একাধিক বার বিএনপি-কে জয় ছিনিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া, কখনও একক ভাবে। কখনও বা জোটের মাধ্য়মে। তবে একটা বড় সময় নির্বাচন বিমুখীও থাকতে হয়েছে এই বিএনপিকেই। তিনি দেখেছিলেন উত্থান, দেখেছিলেন পতন। আজ খালেদা জিয়া নেই, রয়েছে তাঁর দল। রয়েছে বাংলাদেশ। রয়েছে সেই অনিশ্চিয়তা, সেই ভয়ের আবহ। যা ছিল আশির দশকে, তা রয়েছে আজও।
২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচন। বাংলাদেশে নৌকার ঝড়। হারিয়ে গেল ধানের শিষ। মুখ হয়ে ফিরলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দুই মহিলা নেত্রীর লড়াই অনন্য। যা কখনও লঙ্ঘন করেছে সীমা, কখনও আবার গড়েছে রাজনৈতিক নজির। ওই বছর খালেদা জিয়া ক্ষমতাচ্যুত হয়েই একের পর এক মামলায় জড়িয়ে গেলেন। যার মধ্য়ে অন্যতম জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল, এই ট্রাস্টের মাধ্য়মে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের আদালতে এই অভিযোগ প্রমাণ হল। এরপর সোজা কারাগার। এই মামলায় ১৭ বছরের সাজা হয়েছিল তাঁর। তবে দু’বছরের সামান্য বেশি সময় জেলে খেটে অসুস্থতার কারণে শর্তসাপেক্ষ জামিন পান তিনি। অবশ্য, ইউনূসের আমলে এই সকল মামলা থেকে নিষ্পত্তি পেয়েছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু নিষ্পত্তি পাননি শারীরিক কষ্ট থেকে।
২০২১ সালের মে মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তারপর থেকেই শুরু হয় যাতনা। একাধিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তিনি। ২০২২ সালে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় তাঁর। চলতি বছরেও লন্ডনে চিকিৎসার জন্য় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। কথা ছিল এই বারও নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু তা আর হল না।
