ঢাকা: শেখ হাসিনার পর, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুরও অপসারণ প্রায় পাকা বললেই চলে। মঙ্গলবার রাতেই তাঁর সরকারি বাসভবন, বঙ্গভবন দখল করার চেষ্টা করেছিল কয়েকশো আন্দোলনকারী। তবে, তার আগেই এই আবহ তৈরি করে দয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাথারা। খোদ আইন উপদেষ্টা, আসিফ নজরুলই বলেছিলেন, চুপ্পুর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় তা ভেবে দেখতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের কার্যালয় থেকে, আইন উপদেষ্টার এই মন্তব্যকে সমর্থনও করা হয়েছে। আসলে এক ঠিলে দুই পাখি মারতে চাইছেন ইউনুস এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশের সংবাদ পোর্টাল প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন, নাকি সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে, এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে। বস্তুত, রাষ্ট্রপতিকে সরানোর দাবি এর আগেও এসেছিল ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে। চুপ্পুকে নিয়োগ করেছিলেন শেখ হাসিনা। তাই তাঁকে পূর্বতন হাসিনা প্রশাসনেরই অংশ বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন। এখন একটা অজুহাত পাওয়া গিয়েছে। কী সেটা? সম্প্রতি, এক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনও প্রামাণ্য নথি বা দলিল নেই। গত ৫ অগস্ট তাঁকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল হাসিনার পদত্যাগের কথা।
সমস্যা হল, ওই দিন রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে চুপ্পু জানিয়েছিলেন হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। শেখ হাসিনা অবশ্য দেশত্যাগের পর দাবি করেছিলেন তিনি ইস্তফা দেননি। কাজেই তিনি এখনও বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রধান। চুপ্পুর সাম্প্রতিক মন্তব্য শেখ হাসিনার সেই দাবিকেই মান্যতা দিয়েছে। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারটাই অসাংবিধানিক। কাজেই মহম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে সরানোটা ইউনুস সরকারের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশে মূল্যবৃদ্ধি যে জায়গায় পৌঁছেছে, সাধারণ মানুষের না খেয়ে মরার জোগার। ইতিমধ্য়েই আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে, এর থেকে হাসিনাই ভাল ছিল। এই পরিস্থিতিতে, সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা অত্যন্ত অস্বস্তিকর।
তবে, চুপ্পুকে সরালে এক ঢিলে আরেক পাখিও মারতে পারবেন মহম্মদ ইউনুস। পরিষ্কার হয়ে যাবে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সরানোর রাস্তাও। তাঁর অপরাধ, তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ১৮ মাসে বেঁধে দিয়েছেন। এতেই তাঁর উপর বেজায় চটেছে ইউনুস সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তার উপর তাঁর নিয়োগও হয়েছিল শেখ হাসিনার আমলেই। শেখ হাসিনার আত্মীয়ও তিনি। কাজেই তাঁকে ছেঁটে ফেলাও ইউনুস সরকারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু, রাষ্ট্রপতি না অনুমোদন দিলে, তাঁকে সরানোর ক্ষমতা নেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। এই কারণেই চুপ্পুকে সরিয়ে, পক্ষের কোনও ব্যক্তিকে ওই আসনে বসিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার আয়োজন শুরু করা হয়েছে। তবে, তাতে কিছু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বাধা রয়েছে। কিন্তু, নয়া বাংলাদেশে সেগুলি কি সত্যিই কোনও বাধা হবে?