
ঢাকা: বাংলাদেশে ভোট আসছে। ভোটের আগে পড়শি দেশে নতুন করে মাথা চাড়া দিয়েছে ভারত-বিরোধিতা। চাগাড় দিয়ে উঠেছে বললেও ভুল হবে না। আর এই আবহেই অবিলম্বে তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরুর দাবিতে গত ১৯শে অক্টোবর রাস্তায় নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। এই ঘটনা ঘিরে একটা নয়, বরং বাংলাদেশে হয়েছে একের পর এক মিছিল। পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। যার সারমর্ম হল চিনকে আমন্ত্রণ। পড়ুয়াদের দাবি, ওদের হাতেই শুরু হোক তিস্তা প্রকল্পের কাজ।
একাংশের মতে, প্রসঙ্গ যখন তিস্তা প্রকল্প, চিন তখন এক পায়ে খাঁড়া। কারণ তিস্তার স্রোতে একবার গা ভাসাতে পারলেই শিলিগুড়ি করিডর ওদের হাতের নাগালে চলে আসবে। ফলে গোটা বিষয়টাই ভারতের কাছেও যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে ২০১১ সাল থেকে ভারত-বাংলাদেশের যে তিস্তা চুক্তি আটকে রয়েছে। সেটা কিন্তু এই তিস্তা প্রকল্প নয়। তিস্তা চুক্তি হল, শুখা মরসুমে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নদীর জলের ভাগাভাগি। আর তিস্তা প্রকল্প হল বাংলাদেশের দিকে তিস্তায় নদীতে ব্যারাজ তৈরি। নদীর গভীরতা বাড়িয়ে সারাবছর পণ্যবাহী জলযান চলাচলের ব্যবস্থা। নদীর দুই তীরে শহর তৈরির মতো কাজ। তবে, তিস্তা চুক্তি আর তিস্তা প্রকল্পের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, ভারত বাংলাদেশকে যতটা জল ছাড়বে, তার ওপরই নির্ভর করবে ওপারে তিস্তা প্রকল্পের ভবিষ্যত। বাংলাদেশের হিসেব প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য প্রথম ধাপে ওদের সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।
চিন এটা দিতে রাজি হলেও হাসিনা সায় দেননি। বরং তিনি ভারতকেই এই কাজটা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মুহাম্মদ ইউনূস আবার গদিতে বসার পর ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি চিনকেই ডাকবেন। তবে চিনের থেকে ধার নিলে যে দেশ বিকিয়ে যাবে, বাংলাদেশের সচেতন মানুষেরা এটাও বোঝেন। ফলে খুব ঘটা করেই ভোটের আগে এই আন্দোলনটা তৈরি করা হচ্ছে।
কিন্তু চিন কেন তিস্তা প্রকল্পে টাকা ঢালবে? এতে তাঁদের কি ফায়দা? এক, তারা বাংলাদেশের ঘরোয়া বিষয়ে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চায়। দুই, নিজেদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে তিস্তাকে ব্যবহার করতে চায়। আর তিন, তারা চায় তিস্তা প্রকল্পের হাত ধরে শিলিগুড়ির চিকেনস নেকের একদম কাছাকাছি চলে আসতে। বাংলাদেশে তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এই প্রকল্পে বড় অংশ জুড়ে থাকবে রংপুর ডিভিশনের লালমণিরহাট জেলা। যে লালমণিরহাটে বাংলাদেশ এখন বায়ুসেনার ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে। যে লালমণিরহাট শিলিগুড়ির একদম কাছেই। ফলে ভারতকে এসব নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভোটের পর পদ্মার জল কোনদিকে গড়াবে, বলা মুশকিল।