চট্টগ্রাম: শহরের অক্সিজেন প্ল্যান্টে কাজ করেন বাবা। রোজ দুপুরেই বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার কারখানায় বাবার কাছে পৌঁছে দিতে যায় ছেলে। শনিবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। বাবার কাছে সবে ভাত পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন, এমন সময়ই মামার ফোন আসে। জানতে পারেন, কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে, তাঁর বাবাও আহত। খবর শুনে সংজ্ঞা হারায় মা, চট্টগ্রামের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পর এমনই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন মালেকা সিদ্দিকি নামক এক তরুণী। শনিবার বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৬ জনের মৃত্য়ু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি কমপক্ষে ২৫ জন। ঘটনার একদিন পরও, আজ রবিবার জারি রয়েছে উদ্ধারকাজ। এরইমধ্যে বিভিন্ন মানুষ, যাদের পরিবারের সদস্যরা বিস্ফোরণে আহত বা নিহত হয়েছেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কা দেখেছেন, তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।
শনিবার বিকেলে হঠাৎই বিস্ফোরণ হয় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় অক্সিজেন প্ল্যান্টে। বিস্ফোরণে যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যেই একজন শামসুল আলম। বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোকে তাঁর মেয়ে মালেকা সিদ্দিকি জানান, তাঁর মামা ফোন করে বলেন যে বিস্ফোরণে তাঁর বাবা আহত হয়েছেন। এরপরই তিনি পরিবারের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, গোটা কারখানা চত্বর রক্তে ভাসছে।
জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণের সময়ে শামসুল আলম কারখানা থেকে আধ কিলোমিটার দূরে একটি কাঠের দোকানে বসেছিলেন। বিস্ফোরণের পরই একটি লোহার টুকরো দোকানের চাল ফুঁড়ে শামসুলের মাথায় এসে পড়ে। লোহার টুকরোর আঘাতে থেঁতলে যায় শামসুলের মাথা। দুর্ঘটনার পরে কিছুক্ষণ জ্ঞান থাকলেও, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে, শামসুলের দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী।
অন্য়দিকে, সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা মোসলেহ উদ্দিনের। ভাগ্যের জোরে তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন গতকাল। প্রথম আলোকে তিনি জানান, প্রতিদিন বিকেল পাঁচটায় ছুটি হয়। কিন্তু শনিবার অফিসের গাড়ি মেরামতির জন্য তিনি বিকেল সোয়া চারটে নাগাদ কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। তাঁর বেরিয়ে যাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। তিনি বলেন, “আমিও হয়তো বেঁচে থাকতাম না। অফিস ছুটির আগে বেরিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য দুঃখ হচ্ছে। এতদিন আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। এক মুহূর্তে সব ওলট-পালট হয়ে গেল।”