ঢাকা: মূল্যবৃদ্ধির আঁচে বিশ্বজুড়ে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। নিম্নবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্তদের পক্ষে দৈনন্দিন সংসার খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। আর এই বাজারে কিনা মাছ-মাংস মিলছে ৫০ টাকায়। ১০ টাকায় তেল, চিনি, ডাল-সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য! ‘সাধ্যের বাজার’ থেকে এমন দামেই খাদ্যপণ্য কিনে নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন সাধারণ মানুষ। না কোনও গল্পকথা নয়। বাংলাদেশের রংপুর সদর উপজেলায় এমনই এক বাজার খোলা হয়েছে। আসলে এটি একটি দোকান। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে সাধর পূরণের জন্য খোলা হয়েছে অস্থায়ী এই দোকান। ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের মধ্যে এই দোকান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
গত শুক্রবার, রংপুর সদর উপজেলার বালাচওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এই দোকান খোলা হয়েছে। গোটা রমজান মাস জুড়ে খোলা থাকবে এই দোকান। মূলত: দেলোয়ার হোসেন নামে এক কলেজ পড়ুয়ার উদ্যোগে এই দোকান খোলা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বালাচওড়া এলাকার আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং ব্যবসায়ী। রোজ বিকেল ৪টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ‘সাধ্যের বাজার’। আর এই বাজার হাসি ফুটিয়েছে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদের মুখে।
তাঁরা বলছেন, বাজারে একটা ব্রয়লার মুরগি কিনতে গেলে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাগে। কাটা মাংসও আধ কেজির নীচে পাওয়া কষ্টকর। সেখানে ৫০ টাকা দিলেই এই দোকান থেকে প্রয়োজনীয় মাংস পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই গরিব মানুষের পাতে অল্প হলেও মাংস উঠছে। হরিপুর, বৈকুণ্ঠপুর, বালাচওড়া, শিবপুর, হল্লাইপাড়া, কুঠিপাড়া, দক্ষিণটারী, ছোট শিবপুর, বড় শিবপুর-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখন রোজ ভিড় জমাচ্ছেন এই ‘সাধ্যের বাজারে’। সাধ্যমতো খাদ্যদ্রব্য কিনে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা।
কিন্তু, কীভাবে এই অভিনব বাজার খোলার কথা মাথায় এল? মূল উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শবে বরাতের দিন তিনি স্থানীয় শ্যামপুরহাটে বাজার করতে গিয়েছিলেন। ব্রয়লার মুরগির দোকানে গিয়ে দেখেছিলেন এক ভিখারী ৫০ টাকার বিনিময়ে মাংস কিনতে চাইছেন। কিন্তু দোকানদার তাঁকে মাংস না দিয়ে ফিরিয়ে দেন। পরে তাঁর বন্ধুদের ঘটনাটি জানিয়েছিলেন দেলোয়ার। এরপরই সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, রমজান মাসে এমন একটি দোকান চালু করবেন, যেখানে ১০ টাকা থেকে শুরু করে মানুষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্যপণ্য কিনতে পারে। তাই এই অভিনব দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে সাধ্যের বাজার। ওই কলেজ পড়ুয়ারা নিজেরাই মূলধন জোগার করেছেন। পাইকারি দরের সঙ্গে শুধুমাত্র পরিবহন খরচ যোগ করে খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। দেলোয়ার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে তাঁদের দোকান থেকে দেড়শ’ মানুষ খাদ্যপণ্য কিনছেন। কয়েকজন কলেজ পড়ুয়ার এই মানবিক উদ্যোগে দারুণ খুশি সাধারণ মানুষ।