ঢাকা: রাত পোহালেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন (Bangladesh General Election)। এই নির্বাচন ঘিরে যেমন প্রচার হয়েছে, তেমনই বিতর্কেরও অন্ত নেই। নির্বাচন শুরুর আগে দফায় দফায় অশান্তির খবরও মিলেছে। বিএনপি সহ একাধিক বিরোধী দলের দাবি, এটা জাতীয় নির্বাচন নয়, বরং সম্প্রীতি নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে বিরোধীদের অস্তিত্বই নেই। এদিকে, নির্বাচন নিয়ে চাপ বেড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিশ্বমঞ্চে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে, বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে। প্রশ্নটা হচ্ছে, কেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত জলঘোলা হচ্ছে? কোন দলেরই বা অবস্থান কী?
৩৫০ আসনে নির্বাচন হয় বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৫০টি আসন মহিলা প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। ১৫০টির বেশি আসনে যে দলই জয়ী হয়, তারা সরকার গঠন করে। ১১ কোটি ৯৩ লাখ, ৩৩ হাজার ১৫৭ ভোটার রয়েছে বাংলাদেশে। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ নির্বাচনে জয়ী হচ্ছে আওয়ামী লিগ। শেষবার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। ৫ বছর বাদে, আবার ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশে। গত নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয়েছিল শেখ হাসিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিল বিএনপির নেতৃত্ব থাকা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যদিও বিএনপির তরফে এই নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানানো হয়। ব্যাপক কারচুপি ও এক তরফা নির্বাচন হয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়। নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নিবাচনের দাবি করা হলেও, বিরোধীদের সেই দাবি ধোপে টেকেনি। ফের সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনাই।
এবারও নির্বাচন ঘোষণার আগে বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি করেছিল। বর্তমান হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে এক অস্থায়ী নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন করানোর দাবি করা হয়। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের অন্যতম শর্তই ছিল, সেই সরকারে থাকতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি থাকলেই নাকি ভোটে ফের কারচুপি হবে। আওয়ামী লিগ এই প্রস্তাব গ্রহণ না করায়, বিএনপির তরফে ঘোষণা করা হয় যে তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশের একাধিক জায়গায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। মিটিং, মিছিলে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে বিএনপি-র প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়, যার মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস অন্যতম। আজ, শনিবারও বিএনপি নেতা নবী উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয় অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে। অন্যদিকে, বিরোধী দল বিএনপির দাবি, এই সব গ্রেফতারি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিরোধীরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, তার জন্যই গ্রেফতার করা হচ্ছে।
বিএনপি সহ বিরোধী দলগুলি নির্বাচন বয়কট করেছে। তবে শাসকদলের প্রার্থীরা একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাচ্ছে না। অনেকেই আওয়ামী লিগের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে এই নিয়েও শাসকদলকে আক্রমণ করছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, শেখ হাসিনাই বলেছেন, আওয়ামী লীগের টিকিট না পেলে নির্দল হিসেবে লড়তে। এইভাবে নিজেই নিজের প্রতিযোগী তৈরি করছে আওয়ামী লিগ
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও, কিছু ছোট দল নির্বাচনে অংশ নেবে। আওয়ামী লিগের তরফেও জানানো হয়েছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে ও বিরোধীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়ার জন্য তারা ২৬টি আসনে প্রার্থী দেবে না। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২৬ আসনে প্রার্থী না দিয়েও আখেরে ক্ষতি হবে না আওয়ামী লিগের। কারণ এই আসনগুলিতে প্রার্থী জাতীয় পার্টি। তারা আবার আওয়ামী লিগের মতাদর্শেই বিশ্বাসী।
গত ডিসেম্বর মাসেই আওয়ামী লিগের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারি নিয়ে বলেছিলেন, “বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলুক, আমরা আগামিকালই ওদের ছেড়ে দেব। যদি ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার না করা হত, তাহলে কি হরতালের দিন দেশে গাড়ি চলাচল করতে পারত? গ্রেফতারি ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। চিন্তাভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে”। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
বাংলাদেশ নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগও উঠেছে। বাংলাদেশের দাবি, আমেরিকা সহ একাধিক দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। ২০২৩ সালেই আমেরিকা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য় এক ভিসা নীতি আনে। ওই নীতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের নির্বাচনে যারা অশান্তি সৃষ্টি করায় দায়ী বা জড়িত থাকবে, তাদের ভিসা দেওয়া হবে না। এই ঘোষণার পরই বিতর্ক শুরু হয়। ভারতও এই ভিসা নীতির বিরোধিতা করে।
রাত পোহালেই নির্বাচন, তার আগে দফায় দফায় অশান্তিতে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। রাজশাহীতে ভোটকেন্দ্রের পাশ থেকে ১০টি ককটেল বোমা উদ্ধার হয়েছে। সীতাকুণ্ডে একটি পিকআপ গাড়ি লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। এছাড়া কক্সবাজারগামী বাস থেকে টাইম বোমা উদ্ধার, টাঙ্গাইল, গাজিপুর, কুমিল্লায় ভোটকেন্দ্রে বোমাবাজি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সামনে এসেছে।