
ঢাকা : ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের কয়েক মাসের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রথম মুদ্রা, ডাকটিকেট, ট্রেনের টিকেট, পোস্টকার্ড ইত্যাদি থেকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু (Urdu) ও ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়। ক্ষোভ বাড়তে থাকে পূর্ববঙ্গের (East Bengal) মানুষের মনে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হারতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। খবর মেলা মাত্রই তদানন্তীন সরকার ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। সমস্ত সমাবেশ, মিছিল, প্রতিবাদ কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আবুল হাসেমের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা হয়। ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে কি না এই প্রশ্নে সভায় দ্বিমত দেখা দেয়। তবে আন্দোলনরত ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙার সংকল্পে অটুট থাকে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অধ্যাপক আবু সাইয়িদি বলেন, “ঢাকা মেডিকেল কলেজের আট তলায় সবাই সেদিন সমাবেত হল। সেই সময় ওই জায়গায় পুলিশি টহল মারাত্মক পরিমাণে বেড়ে যায়। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে। তারমধ্যেই চলতে থাকে সভা।”
পরদিন সকাল ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের হস্টেলের বাইরে, সবুজ ছড়ানো মাঠটাতে অগুনতি লোকের ভিড় জমেছিল সেদিন। ভোর হতে ক্রুদ্ধ ছেলেবুড়োরা এসে জমায়েত হয়েছিল সেখানে। কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে স্লোগান দেবার চুঙ্গো, আবার কারও হাতে লম্বা লাঠি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় শুরু হয় আরও একটি সভা। সভা শুরু হলে অধ্যাপকরা ছাত্রদের ১৪৪ ধারা ভাঙতে নিষেধ করেন। তবে ছাত্র নেতৃত্বরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জড়ো হয়। দীপ্ত পায়ে এগোতে শুরু করে মিছিল। তারপর তৈরি হয় ইতিহাস। খানিক পড়েই শোনা যায় লাগাতার গুলির শব্দ। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। যে গুলির শব্দ আজও গেঁথে বাঙালির হৃদয়ে।