ঢাকা : কবরস্থানে দাফন হচ্ছে একের পর এক লাশ। বাতাস ভারাক্রান্ত স্বজনহারা মানুষের কান্নায়। অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও আড়াই বছরের শিশুর কোনও খোঁজ পেল না তার পরিবার। মেয়ে আদৌ বেঁচে আছে তো! এই ভাবনাতেই বুক ফাটছে বাবা-মায়ের। বাংলাদেশে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। অভিশপ্ত সেই লঞ্চ থেকে কোনও ক্রমে বেঁচে ফিরেছেন বাবা- মা। কিন্তু তাবাচ্ছুমের খোঁজে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
বরগুনাগামী অভিযান-১০ নামক একটি লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ আড়াই বছরের শিশু তাবাচ্ছুম। শনিবার সারাদিনেও তার খোঁজ মেলেনি। এদিকে শুক্রবার থেকে তাবাচ্ছুমের মতো দেখতে এক শিশুর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাবাচ্ছুমের আত্মীয়দের দাবি, ছবির শিশুটিই তাবাচ্ছুম। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ওই শিশু সাদা চাদরের ওপর চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। শিশুটি বেঁচে আছে কি না, সেটা বোঝা যাচ্ছে না ছবি দেখে। ওই ছবিতে সাদা গ্লাভস পরা একটি হাত ওই শিশুর মাথার ঠেকানো। সাদা গ্লাভস পরা ওই হাত দেখে অনেকের অনুমান শিশুকে কোনও হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
নিখোঁজ তাবাচ্ছুম পাথরঘাটার ছোট পাথরঘাটা বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম মোহম্মদ নাছরুল্লাহর মেয়ে। মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে মোহাম্মদ নাছরুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়াসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঝালকাঠি ও বরগুনা ছুটে বেড়াচ্ছেন। তবে ওই ছবির ব্যাপারে মোহাম্মদ নাছরুল্লাহ বা তাঁর স্ত্রী সোনিয়া কিছু জানাননি।
তাবাচ্ছুমের বাব নাছরুল্লাহ সংবাদমাধ্যমে জানান, লঞ্চের দ্বিতীয় তলার ডেকে স্ত্রী সোনিয়া আক্তার ও সন্তান তাবাচ্ছুমকে নিয়ে শুয়েছিলেন তিনি। মধ্যরাতে লঞ্চে আগুনের খবর পেয়ে তাঁরা সিঁড়ি বেয়ে লঞ্চের ছাদে চলে যান।
মোহাম্মদ নাছরুল্লাহ জানিয়েছেন, অনেক যাত্রীর সঙ্গে তিনি ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া মেয়ে তাবাচ্ছুমকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। ঝাঁপ দেওয়ার পর তাবাচ্ছুম তাঁর হাতের মধ্যেই ছিল। এরপর সাঁতার কাটার সময় হঠাৎ করে হাত পিছলে তাবাচ্ছুম পড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্য়েই তিনি বুঝতে পারেন মেয়ে তাঁর পায়ের কাছে। কোনওরকমে পা দিয়ে তাবাচ্ছুমকে টেনে কাছে নেন আবার। আবার হাতে নিয়ে সাঁতরে কিছু দূর এগিয়ে যেতেই ফের হাত ফস্কে পড়ে যায় তাবাচ্ছুম। কিছুক্ষণের মধ্যেই একমাত্র মেয়েকে নদীতে হারিয়ে ফেলেন তিনি।
‘এমভি-অভিযান ১০’ নামে তিনতলা ওই লঞ্চে প্রায় এক হাজার যাত্রী ছিল। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই লঞ্চ ঝালকাঠির গাবখানের কাছে সুগন্ধী নদীতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আচমকাই দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে লঞ্চটি। মাঝ নদীতে এমন বিপদে কেউ কেউ দিশেহারা হয়ে নদীতেই ঝাঁপ দেন। কেউ কেউ আবার মৃত্যুর চোখ চোখ রেখে থেকে যান লঞ্চেই।
আরও পড়ুন : Omicron in Britain: প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন কোভিড আক্রান্ত! টেমসের তীরে নতুন আতঙ্ক