বাংলাদেশ: বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করতে হাসিনার (Shaikh Hasina) সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন মোদী (Narendra Modi)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের আগে টুইটারে এমনই আবেদন জানালেন লেখক তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasreen)।
আগামী ২৬ মার্চ দু’দিনের বাংলাদেশ সফরে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। গত বছর করোনাভাইরাস প্রকোপ শুরুর পর এটাই হতে চলেছে মোদীর প্রথম বিদেশ সফর। তাতে যথারীতি অগ্রাধিকার পাচ্ছে ‘প্রতিবেশি প্রথম’ নীতি। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ভোটের মুখে দাঁড়ানো পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়াও প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য হতে পারে। এই প্রেক্ষিতে শনিবার ‘নির্বাসিত’-র লেখক তসলিমার টুইট, “বিভিন্ন দিক থেকেই বাংলাদেশকে সাহায্য করছে ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আমার আবেদন, সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার বন্ধের জন্য যাতে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয় তার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করুন উনি।”
India helps Bangladesh in many ways. I request @PMOIndia to talk with PM of Bangladesh for taking all necessary measures to stop attacks on Hindu minorities.
— taslima nasreen (@taslimanasreen) March 20, 2021
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বারবার সমালোচনা করেছেন তসলিমা। হাসিনার জন্যই বাংলাদেশে মৌলবাদের বাড়বাড়ন্ত, তাঁর জন্যই ইসলামী মৌলবাদ বিস্তারলাভ করেছে বলে একাধিকবার মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে ‘লজ্জা’র লেখককে। এবার মোদীর বাংলাদেশ সফরের আগে প্রধানমন্ত্রীর টুইটার হ্যান্ডেলকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বন্ধের জন্য আলোচনায় বসার আবেদন করলেন তিনি। এই টুইটের কমেন্টে এক জায়গায় আবার হাসিনাকে একহাত নিয়ে তসলিমা লেখেন, হিন্দুদের ওপর আক্রমণ যে ভুল, এমনটা মনে করেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যদি ভুল মনে করতেন অবশ্যই তা হতে দিতেন না। এর পর আরও আক্রম শানিয়ে তসলিমা লেখেন, জেহাদীদের বাড়বড়ন্ত হাসিনার জন্যই।
বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবর্ষ– ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সে দেশে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই সঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন তিনি। এই অনুষ্ঠানগুলিকে ‘তিনটি উল্লেখজনক অনুষ্ঠান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। সফরের প্রথম দিনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার টেবিলে বসবেন। রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ এবং বিদেশমন্ত্রী একে আবদুল মোমের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। সাউথ ব্লকের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোভিত মহামারীর প্রকোপ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর। যে সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে যোগসূত্র আছে, তাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: হাসিনা এক হাতে জেহাদি তৈরি করেন এক হাতে মারেন: তসলিমা
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে শেষবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন মোদী। তারপর থেকে একাধিকবার হাসিনার সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলাপচারিতা সেরেছেন। কিছুদিন আগে ত্রিপুরায় ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ‘মৈত্রী সেতু’-র উদ্বোধন করেন মোদী। সেই সেতুর ফলে আগরতলার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। নয়া সেতুর ফলে আগরতলার থেকে নিকটতম আন্তর্জাতিক বন্দর চট্টগ্রামের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের নীচে হয়েছে। আগে আগরতলার সবথেকে কাছে ছিল কলকাতা বন্দর। প্রায় ১,৬০০ কিমি দূরত্ব। সাউথ ব্লকের কর্তাদের মতে, একাধিকবার ভার্চুয়ালি আলোচনা হলেও মুখোমুখি বৈঠকের উষ্ণতার অভাব রয়ে গিয়েছে। তা এই সফরে কেটে যাবে বলে ধারণা তাঁদের।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে নিষিদ্ধ বোরখা ও মাদ্রাসা, প্রতিবাদে বিদেশমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি মুসলিম সংগঠনের
একইসঙ্গে এবারের বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে (২৭ মার্চ) সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যাবেন মোদী। পুজো দেবেন ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরীর মন্দিরে। ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের মন্দিরেও যাবেন। সাতক্ষীরা এবং ওড়াকান্দি সফরকে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছাড়িয়ে ঘরোয়া রাজনীতি আঙিনায় দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ ভোটের আগে তা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।