লন্ডন: জাদুঘরে এসে নিজেরই হৃৎপিণ্ডের মুখোমুখি হলেন মহিলা। কাচের বাক্সে রাখা হৃৎপিণ্ডটি ১৬ বছর আগে তাঁর দেহ থেকে অপসারিত করা হয়েছিল। প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল অপর এক ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড দিয়ে। ওই অস্ত্রোপচারই প্রাণ বাঁচিয়েছিল হ্যাম্পশায়ারের রিংউড এলাকার বাসিন্দা জেনিফার সাটনের। আর তারপর থেকে তাঁর নিজের হৃৎপিণ্ডটি রাখা আছে লন্ডনের হান্টেরিয়ান মিউজিয়ামে। সম্প্রতি, ৩৮ বছর বয়সী জেনিফার মিউজিয়ামে গিয়ে মুখোমুখি হন তাঁর নিজের হৃৎপিণ্ডের। তাঁর মতে, নিজের হৎফিণ্ডের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল একেবারে ‘পরাবাস্তব’। তিনি আরও জানিয়েছেন, তাঁর মতে অঙ্গ দানই হল ‘সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার’, আর তাই বর্তমানে তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে অঙ্গদানের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করতে চান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জেনিফার জানিয়েছেন, প্রতিস্থাপিত হৃৎপিণ্ড নিয়ে তিনি এখন অত্যন্ত সক্রিয় এবং ব্যস্ত জীবনযাপন করছেন। কিন্তু, ১৬ বছর আগে তাঁর জীবনে নেমে এসেছিল অন্ধকার। সেই সময় ২২ বছর বয়সী জেনিফার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। আচমকা লক্ষ্য করেছিলেন, অল্প বিস্তর হাঁটাহাঁটি করতে গিয়েই হাঁফিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতেই, দ্রুত তাঁর শরীরের ‘লিমিটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি’ ধরা পড়েছিল। এই রোগে হৃদপিণ্ডের শরীরে রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়। ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা না গেলে তাঁর মৃত্যু অবধারিত। জেনিফারের স্বাস্থ্যের অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটেছিল। কিন্তু, ট্রান্সপ্লান্টের জন্য দীর্ঘ সময় তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ২০০৭ সালের জুনে তিনি সুখবর পেয়েছিলেন, একজন ডোনারের সঙ্গে তাঁর নমুনা মিলে গিয়েছে।
তবে, এরপর জেনিফারকে লড়তে হয়েছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপন নিয়ে তাঁর নিজস্ব উদ্বেগের সঙ্গে। আসলে তাঁর ১৩ বছর বয়সে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর মায়ের। তবে, তাঁর অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হয়নি। ভালয় ভালয় মিটেছিল অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের পর, ‘রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস’ তাঁর খারাপ হয়ে যাওযা হৃদপিণ্ডটি হলবর্নের জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য অনুমতি চেয়েছিল। অনুমতি দিয়েছিলেন জেনিফার। তারপর ১৬ বছর কেটে গিয়েছে। সম্প্রতি, প্রথমবার তিনি সেই জাদুঘরে গিয়ে নিজের হৃৎপিণ্ডটি দেখেছেন। জেনিফার জানিয়েছেন, প্রথম দেখাতেই তাঁর মনে এসেছিল একটাই কথা, ‘এটা আমার শরীরের ভিতরে ছিল!’ জেনিফার বলেছেন, “এটা (নিজের হৃৎপিণ্ড) দেখে মনে হয়েছিল ও আমার বন্ধুর মতো। এটা আমাকে ২২ বছর ধরে বাঁচিয়ে রেখেছিল। আমি আমার জীবদ্দশায় জারে রাখা অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু কাচের জারে নিজের হৃৎপিণ্ড রাখা আছে, এটা ভাবনাটাই আসলে খুব অদ্ভুত।”