
ওয়াশিংটন: বছর ঘুরলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নাম লিখিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) থেকে শুরু করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের মাঝেই বড় ধাক্কা খেলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (US President Election 2024) প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। মাত্র আধ ঘণ্টার জন্য জেলে গেলেও, এই গ্রেফতারি তাঁর প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার হলে, গারদের পিছন থেকেও কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন ট্রাম্প? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক গৌতম জিলানি।
প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন দুইবার ইমপিচমেন্টের মুখে পড়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৭৭ বছর বয়সী রিপাবলিকান নেতার বিরুদ্ধে চারটি মামলায় তদন্ত চলছে। এরমধ্য়ে একটি জর্জিয়ায়, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ অগস্ট তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২ লক্ষ ডলারের বন্ডে তিনি জামিন পান। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ ওঠার পর থেকে চারবার স্থানীয় বা ফেডেরাল আধিকারিকদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন ট্রাম্প। এরপরও তিনি ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম পদপ্রার্থী!
গত ২৩ অগস্ট প্রথম রিপাবলিকান প্রেসিডেন্সিয়াল বির্তক এড়িয়ে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও বিতর্কসভার পরেই তিনি একটি ইন্টারভিউয়ে হাজির হন। ওই ইন্টারভিউয়ে ১৬০ মিলিয়ন বা ১৬ কোটি ভিউ হয়েছে, যা সবথেকে বেশি দেখা ইন্টারভিউ।
এবার আসা যাক মূল প্রশ্নে। ট্রাম্পের গ্রেফতারি কি নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে? উত্তর হল না। মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনে পদপ্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে। তাঁকে অবশ্য়ই মার্কিন নাগরিক হতে হবে এবং আমেরিকায় কমপক্ষে ১৪ বছর বসবাস করতে হবে। যদি কারোর ক্রিমিনাল বা অপরাধের রেকর্ড থাকে, তবুও তিনি নির্বাচনে লড়তে পারবেন। আমেরিকার কয়েকটি রাজ্যে অপরাধের রেকর্ড থাকলে নির্বাচনে লড়ার অনুমতি না থাকলেও, হোয়াইট হাউসের মতো ফেডেরাল অফিসে লড়ার ক্ষেত্রে এমন কোনও নিয়ম নেই।
যদিও, ট্রাম্পের সমালোচকদের দাবি, মার্কিন সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনের ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে লড়তে পারবেন না। যদি কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য ট্রাম্পকে ‘ক্ষমা’ করে নির্বাচনে লড়াইয়ের অনুমতি না দেন, তবে তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে পারবেন না। ২০২০ সালে নির্বাচনে হারার পর ট্রাম্পের সমর্থকরা মার্কিন ক্যাপিটলে যে হামলা চালিয়েছিল, তা সংবিধান অনুযায়ী আইন বিরুদ্ধ।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অপরাধমূলক মামলা রয়েছে, তাতে তাঁর নির্বাচনে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা হবে না।
নির্বাচনে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ বাধা না থাকলেও, প্রচারের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কারণ জেলের গারদের পিছন থেকে নির্বাচনী প্রচার চালানো কার্যত অসম্ভব। মার্কিন ইতিহাসে একমাত্র সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা ইউজিন ডেবস ১৯২০ সালে জেলবন্দি থাকাকালীন নির্বাচনে লড়েছেন। তবে তিনি মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
আইনগত ভাবে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলবন্দি থাকাকালীনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে পারেন। মার্কিন সংবিধানে এই নিয়ে কোনও বিধান দেওয়া নেই। নির্বাচনে জয়ী হলে সংবিধানের ২৫ তম সংশোধন অনুযায়ী, ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাইস-প্রেসিডেন্ট যাবতীয় দায়িত্ব পাবেন। তবে এর জন্য প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের ক্যাবিনেটের সংখ্য়াগরিষ্ঠতা থাকা প্রয়োজন, যা কার্যত অসম্ভব।
আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন। মার্কিন সংবিধান সেই ক্ষমতাও দিয়েছে প্রেসিডেন্টকে। ইমপিচমেন্ট হতে পারে, এমন কোনও মামলা ছাড়া অন্য়ান্য সমস্ত ফেডেরাল অপরাধ থেকে নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন। যদি ২০২৪ সালে নির্বাচনে জয়ী হন ট্রাম্প, তবে তিনি শপথ নেওয়ার পরই নিজের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন।