বট-অশ্বত্থ গাছ যে বহুদিন বাঁচে তা তো আমরা জানি। কিন্তু, যে গাছ ৩ হাজার বছর বাঁচে। পরিবেশ সহায়ক হলে বেঁচে থাকতে পারে ৫ হাজার বছরও। কল্পনা করতে পারেন! বিভূতিভূষণের চাঁদের পাহাড়ে শঙ্কর এই গাছ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল। বাওবাব। বলা হয় ট্রি অফ লাইফ। মহীরুহ বলতে যা বোঝায় তা এই বাওবাব। গোটা আফ্রিকা মহাদেশের আইডেন্টিটি। আফ্রিকার মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ গাছ। ১০০ মিটার লম্বা হয়। পরিধির কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। কারণ, হাতিও এই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়।
এই বাওবাবের গুঁড়ি ধরে রাখতে পারে ১ লক্ষ লিটার জল। এই গাছই আজ বিপন্ন। আফ্রিকার বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাওবাব। দক্ষিণ আফ্রিকার একদল গবেষক সম্প্রতি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ঘুরে একথা জানিয়েছেন। চিন্তার বিষয় হল বাওবাব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে ভেঙে পড়বে আফ্রিকার বাস্তুতন্ত্র। চলে যাবে মানুষের রুটি-রুজি। একটা গাছ একাই একটা বাস্তুতন্ত্র। এমন উদাহরণ দুনিয়ায় আর নেই। একটা মাত্র বাওবাব গাছকে ঘিরে বেঁচে থাকে অসংখ্য পাখি, বাঁদর, বাদুড়, সরীসৃপ এমনকি হাতিও। গরমকালে যখন জল পাওয়া যায় না, তখন বাওবাবের আর্দ্র ছাল চিবিয়ে জল তেষ্টা মেটায় হাতি। মানুষও উপকৃত হয় এই গাছের দ্বারা। বাওবাবের ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর।
স্থানীয় মানুষেরা এই ফল খেয়ে বেঁচে থাকেন। ফল বিক্রি করে রোজগার করেন। বাওবাবের পাতাও সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। পুষ্টিগুণ আছে তাতেও। এই গাছের ফুলের পরাগ থেকে তৈরি হয় আঠা। ছাল থেকে তৈরি হয় দড়ি, মাদুর, ঝুড়ি-সহ আরও নানা জিনিস। আফ্রিকার আদিবাসীরা এই গাছের পাতা, ফল, বীজ, ছাল ও কাণ্ডকে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করেন। এইজন্যই বাওবাবকে বলা হয় ট্রি অফ লাইফ। একটা গাছ একা অসংখ্য প্রাণী ও মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই, এই গাছ হারিয়ে যাওয়ার খবরে সারা দুনিয়ার বিজ্ঞানী-গবেষকদের মধ্যে চিন্তা বেড়েছে। কিছুদিন আগে নেচার পত্রিকায় একটা প্রবন্ধ বেরোয়। তাতে বলা হয়েছে কোনও অসুখ বা মড়ক নয়। জলবায়ু বদলে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে আফ্রিকার সাভানা তৃণভূমির পরিবেশ। সুপ্রাচীন এই গাছগুলি নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে। আশার খবর বলতে একটা। আফ্রিকার দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-মারামারি লেগেই আছে। তবে বাওবাব বাঁচাতে বিরোধ ভুলে একজোট হয়েছে তারা। তৈরি হয়েছে আফ্রিকান বাওবাব অ্যালায়েন্স। স্থানীয় আদিবাসী থেকে বাওবাব এক্সপার্টরা তাতে সামিল হয়েছেন। সঙ্কল্প নিয়েছেন হাজার বছরের বৃদ্ধ মহীরুহগুলোকে ভালোবেসে তাদের মগডালে গজিয়েই ছাড়বেন নতুন কচি সবুজ পাতা।