China-Korea-Russia Meeting: বেজিংয়ে একজোট শি-পুতিন-কিম! চিনা সেনার দাপাদাপির আগাম খবরে ঘুম উড়ছে ট্রাম্পের

China-USA Relation: চিনা সেনার সবচেয়ে বড় সামরিক প্রদর্শন। সেখানেই একজোট শি-কিম ও পুতিন। ট্রাম্পের বুকে কাঁপন ধরাতে এটুকুই যথেষ্ট। কী সিদ্ধান্ত নেবেন তিন মার্কিন বিরোধী রাষ্ট্রনেতা? বিশ্বজুড়ে কি নয়া সমীকরণ?

China-Korea-Russia Meeting: বেজিংয়ে একজোট শি-পুতিন-কিম! চিনা সেনার দাপাদাপির আগাম খবরে ঘুম উড়ছে ট্রাম্পের
ফাইল চিত্র।Image Credit source: X

| Edited By: ঈপ্সা চ্যাটার্জী

Aug 28, 2025 | 12:32 PM

চিনের সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে বড় সামরিক সজ্জার প্রদর্শন। আর সেই অনুষ্ঠানে একত্র হচ্ছেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, উত্তর কোরিয়ার খ্যাপাটে যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনজনে একসঙ্গে ‘ফটো-অপ’ করবেন বলেও ইতিমধ্যেই স্থির হয়ে গিয়েছে। রুশ তেল কেনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ভারত, চিনের উপর খড়গহস্ত, ঠিক সেই সময়ে তীব্র মার্কিন বিরোধী তিন পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রনায়কদের একজোট হওয়াকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

মনে রাখতে হবে, চিনেরই তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবছরের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকে। ৩১ অগস্ট থেকে পয়লা সেপ্টেম্বর- দুদিনের বৈঠকে যোগ দিতে ৭ বছর পর লালচিনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সাংহাই সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে শি, পুতিনের আলোচনা যে হচ্ছে, সেটাও প্রায় নিশ্চিত। সবমিলিয়ে অগস্টের শেষ ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে বন্ধ দরজার পিছনে চিনে কী কী ঘটতে চলেছে, সেদিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে ওয়াশিংটনকে।

বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছেন, মার্কিন দাদাগিরিকে এখন আর গুরুত্ব দিতে নারাজ চিন-রাশিয়া-ভারত ও ইরানের মতো দেশ। চায়না গ্লোবাল সাউথ প্রজেক্টের এডিটর ইন চিফের বক্তব্য, ‘হোয়াইট হাউসের রক্ষচক্ষুকে এখন আর এই সব দেশ ভয় পায় না। গত কয়েক মাস ধরে এই সব দেশগুলি বারবার ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনার শিকার হয়েছে। এবার এই সব দেশ এক হয়ে নিজেদের মধ্যে একটি সুবিধাজনক ও সম্মানজনক জোট তৈরি করবে।’

সাংহাই বৈঠকের পাশাপাশি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তিতে চিনের লালফৌজ আগামী ৩ সেপ্টেম্বর নিজেদের সামরিক ক্ষমতার বহর দেখাবে। বেজিংয়ের তিয়ানানমেন স্কোয়ারে ওইদিন কিম, পুতিন-সহ অন্তত ২ ডজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে চিনা বিদেশমন্ত্রক।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম অনেকদিন পর নিজের দেশ ছেড়ে বেরোচ্ছেন। ২০১১-তে ক্ষমতায় আসার পর সবমিলিয়ে মাত্র ১০ বার বিদেশ সফরে গিয়েছেন কিম। তাঁর উপর প্রতি মুহূর্তে নজরদারি চালাতে চায় মার্কিন গোয়েন্দারা। কিন্তু কিম নিজের দেশে থাকাকালীন সিআইএ-র সেই প্রচেষ্টা খুব একটা সফল হয় না। এবার বেজিংয়ের ‘গেট অফ হেভেনলি পিস’-এ শি, কিম ও পুতিনের একজোট হওয়ার ছবি নিঃসন্দেহে মার্কিন গোয়েন্দাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেবে।

রক্তচাপ বাড়তে চলেছে ওয়াশিংটনেরও। কারণ, শি বেছে বেছে সেই সব দেশের নেতাদেরই এই অনুষ্ঠানে ডেকেছেন যাঁরা হয় চিনের থেকে অস্ত্র কেনে, বা আমেরিকা যাদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রেখেছে। তাই সাংহাই সম্মেলনে যোগ দিলেও এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিতদের তালিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম নেই। তবে রয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নাম। সার্বিয়া ও স্লোভাকিয়ার মতো রাশিয়ার প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ইউরোপীয় দেশের নেতারাও থাকবেন।

৭০ মিনিটের প্যারেডে ১০ হাজারেরও বেশি লালফৌজ হাঁটবে রাজপথে। মহড়ায় অংশ নেবে ১০০টি অত্যাধুনিক চিনা যুদ্ধবিমান। থাকবে কয়েকশো ট্যাঙ্ক, ড্রোন, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, মিসাইল, রেডার-সহ অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম। শি ক্ষমতায় আসার পরেই পিপলস লিবারেশন আর্মি-কে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর আমলেই চিনা সেনার আধুনিকীকরণ হয়েছে। তাই এই প্যারেড শি-এর কাছে রীতিমতো ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’। চিনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বেজিংয়ের সব চেয়ে আধুনিক ড্রোন, ইলেক্ট্রনিক জ্যামিং সিস্টেম, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, এয়ার ডিফেন্স ও মিসাইল দেখানো হবে প্রকাশ্যে। যাতে আমেরিকাকে বার্তা দেওয়া যায়, শুধু মার্কিন অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আর ভয় দেখানো যাবে না বেজিংকে।

মার্কিন গোয়েন্দাদের মাথাব্যাথা বাড়াচ্ছেন পুতিন-ও। ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিকতম আলাস্কা বৈঠকে যোগ দিলেও ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে উচ্চবাচ্য করেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পকে লেজে খেলিয়ে চলেছেন। ট্রাম্পেরও আর একটা যুদ্ধ থামিয়ে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। তারউপর আবার ‘বন্ধু’ পুতিনকে সাহায্য করতে ইউক্রেনে সেনা পাঠাচ্ছেন কিম-ও। পুতিন ও কিমের মধ্যে গতবছরই প্রতিরক্ষা খাতে এক ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছে। রাশিয়া যেখানে আক্রান্ত হবে, কিম সেখানেই সেনা পাঠিয়ে সাহায্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যেই আবার চিনা বিদেশমন্ত্রকের সহকারী চিন ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বকে ‘ট্র্যাডিশনাল’ বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘চিন ও উত্তর কোরিয়া যে কোনও আন্তর্জাতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হাতে হাত মিলিয়ে লড়বে।’ এই কটাক্ষ যে আসলে আমেরিকাকেই লক্ষ্য করে, সেটা আলাদা করে বলে দেওয়ার দরকার নেই।