বেজিং: ২০০৬ সালে ইয়াংজি নদীর উপর থ্রি গর্জেস বাঁধ তৈরি করেছিল চিন সরকার। নাসা আর্থ অবজারভেটরি অনুসারে, এটিই বিশ্বের বৃহত্তম সক্রিয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। আর এই বাঁধটি এতটাই বড় যে, তার বিশাল আকারের প্রভাব পড়েছে গ্রহের ঘূর্ণনেও। আইএফএল সায়েন্সের মতে, পৃথিবীর ভর বিতরণ প্রভাবিত হয়েছে এই বাঁধের জলের কারণে। আর তাই, কমে গিয়েছে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি। পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টায় দিন হয়। চিনের এই বাঁধের কারণে, তার মধ্যে অন্তত একটি মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডের বদলে ৫৯ সেকেন্ডে মাপা উচিত।
থ্রি গর্জেস বাঁধের উচ্চতা প্রায় ৫৯৪ ফুট বা ১৮১ মিটার। দৈর্ঘ্যে এটি ৭,৭৭০ ফুট বা ২,৩৩৫ মিটার। মার্কিন জিওলজিক্যাল সায়েন্স জানিয়েছে, এই বিশাল বাঁধটির যে জলাধার, তার পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৪০০ বর্গ মাইল বা ১,০৪৫ বর্গ কিলোমিটার। ২০১২ সালে এটি পূর্ণ ক্ষমতায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। তার আগে পর্যন্ত ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের ইতাইপু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছিল বিশ্বর সবথেকে বড় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। কিন্তু, ২০১২-র পর সেই তাজ ছিনিয়ে নেয় চিনের থ্রি গর্জেস বাঁধ। ইটাইপু বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৪,০০০ মেগাওয়াট। সেখানে থ্রি গর্জেস বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২,৫০০ মেগাওয়াট।
তবে এই বাঁধটি তৈরির আগেই মার্কিন মহাকাশ চর্চা কেন্দ্র, নাসা পৃথিবীতে ভরের বন্টনে এইভাবে পরিবর্তন করলে তা গ্রহের জড়তার ভ্রামককে প্রভাবিত করতে পারে। কোন বস্তুর ঘূর্ণনশীল গতিবিধির পরিবর্তনের জন্য যে বলের প্রয়োজন হয়, তাকেই তার জড়তার ভ্রমাক বলে। নাসার গদার্দ স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের ডা. বেঞ্জামিন ফং চাও জানিয়েছিলেন, বাঁধটির জলাধারটি মোট ৪০ কিউবিক কিলোমিটার জল ধারণ করতে পারে। এর ফলে পৃথিবীর ভরের যে স্থানান্তর হবে, তা পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্যকে ০.০৬ মাইক্রোসেকেন্ড বাড়িয়ে দেবে। চাও জানিয়েছিলেন, “মৌসুমী আবহাওয়া থেকে গাড়ি চালানো পর্যন্ত, যে কোনও পার্থিব ঘটনা যা ভর স্থানান্তরের সঙ্গে জড়িয়ে, তা পৃথিবীর ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করে।” তাই, বাঁধ তৈরির ফলে এই বিপুল ভরের পরিবর্তন আমাদের গ্রহের সিসমিক কাঠামোকে নাড়িয়ে দেবে। যা শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি কমিয়ে দেবে।
থ্রি গর্জেস বাঁধের ফলে বর্তমান পৃথিবীতে আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে। তবে, বিজ্ঞানীরা সেগুলি নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নন। তবে তাঁদের মতে, ভবিষ্যতে এর যে প্রভাবগুলি পড়বে, সেগুলিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। নাসার মতে, ভর বন্টনের পরিবর্তন শুধুমাত্র পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতির পরিবর্তন ঘটায়নি। তার পাশাপাশি গ্রহের আকৃতিও বদলে দিয়েছে। থ্রি গর্জেস বাঁধের দল পৃথিবীর মাঝখানের অংশটা একটু বেশি ফুলিয়ে দিয়েছে, আর উপরে-নীচে একটু চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে পৃথিবীর দুই মেরু অবস্থান অন্তত দুই সেন্টিমিটার বা ০.৮ ইঞ্চি করে সরে গিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত ‘পরিবর্তন’ আমাদের ‘দিন’ এবং ‘বছর’-এর হিসেব গোলমাল করে দিতে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলাতেই বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র একটি মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে গুনতে।