
নিজেদের সামরিক শক্তি কালেভদ্রে প্রকাশ্যে আনে চিন। কিন্তু যখন আনে, বাকি বিশ্ব হাঁ করে তাকিয়ে দেখে। তেমনই এক বিরল মুহূর্তের সাক্ষী থাকল দুনিয়া। ৩ জুন, নিজেদের সবচেয়ে মারাত্মক পরমাণু হাতিয়ার নিয়ে বেজিংয়ের রাজপথে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করল চিনা লালফৌজ। মোবাইল লঞ্চারে চাপিয়ে রাজপথে প্যারেড করানো হল কয়েকশো ডিএফ-৫বি ব্যালিস্টিক মিসাইল-কে। এক একটি মিসাইল ৩-৪ টন পর্যন্ত পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম।
হামলায় কতটা ক্ষতি করতে পারে? একটা সহজ উদাহরণ দিই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে যে পরমাণু বোমা ফেলেছিল আমেরিকা- তার চেয়ে অন্তত ২০০ গুণ বেশি শক্তিশালী এই পরমাণু বোমা বহনকারী মিসাইল। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গোল্ডেন ডোম’ নিয়ে হুঁশিয়ারির মধ্যে এই মিসাইলের শক্তি প্রদর্শন আসলে ঘুরিয়ে ট্রাম্পকেই বার্তা দেওয়া যে, মার্কিন ভূখণ্ডও এখন আর চিনের হামলার পরিধির বাইরে নয়।
ডিএফ-৫বি-র পাল্লা কতদূর? মানে এক জায়গা থেকে ছুঁড়লে কতদূর যাবে?
চিনা সেনার দাবি, এই ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল ১২,০০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আছড়ে পড়তে পারে। তাও আবার নিখুঁত টার্গেটে। চিনা সেনার ভাঁড়ারে যত অস্ত্র আছে, এটা তার মধ্যে সবচেয়ে খতরনাক। ডিএফ-৫ মডেলের সিরিজের সবচেয়ে আধুনিক মিসাইল এটি। মিসাইলের এই সিরিজ তৈরির কাজ শুরু হয় আশির দশকে, ঠাণ্ডা যুদ্ধের আমলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিএফ-৫বি-কে আরও ঘাতক করে তোলা হয়েছে। ডিএফ-৫ একটি মাত্র বোমা বহন করতে পারত। কিন্তু আধুনা এই ক্ষেপণাস্ত্র ৬-১০টি পরমাণু বোমা একসঙ্গে বহনে সক্ষম। উদ্বেগের বিষয় হল, সম্প্রতি চিনা সেনা এই মিসাইলের সঙ্গে MIRV বা মাল্টিপল ইনডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটবেল র-এন্ট্রি ভেহিক্যালের সঙ্গে ইন্টিগ্রেট করতে পেরেছে। ফলে একটি মিসাইল একসঙ্গে একাধিক পরমাণু বোমা ফেলতে পারে আলাদা আলাদা ভৌগোলিক অবস্থানে। প্রতিটি বোমা বায়ুস্তরে আলাদা আলাদা সময়ে প্রবেশ করবে যে কারণে শত্রুর মিসাইল ডিফেন্সের পক্ষে একে নিষ্ক্রিয় করার কাজ আরও কঠিন হয়ে যাবে।
কতটা নিখুঁতভাবে হামলা করতে পারে?
এটা আর একটা বড় উদ্বেগের জায়গা বিশ্বের জন্য। কারণ টার্গেট বেঁধে দিলে তার আশেপাশে সর্বোচ্চ ৫০০ মিটারের বেশি দূরে এটি যাবে না। অর্থাৎ টার্গেটকেই পাখির চোখ করে হামলা করবে। স্যাটেলাইট নির্ভর ন্যাভিগেশন সিস্টেমের জন্য মাঝপথেও কোর্স কারেকশন করতে পারে মিসাইলটি। চলে তরল জ্বালানিতে। শত্রুর সীমান্তের অনেকটা ভিতরে ঢুকে হামলা চালাতে আদর্শ। কারণ অনেকদূর পর্যন্ত উড়তে পারে। যে কারণে এই মিসাইলকে এভাবে জনসমক্ষে আনায় প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে পেন্টাগন। এই নয়া মিসাইল দুই দেশের মধ্যে চোরা টেনশন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।