লন্ডন: ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথকে সম্মান জানাতে এসে চুড়ান্ত অপমানিত হতে হল চিনা সরকারি প্রতিনিধি দলকে। রানির কফিনের ধারে কাছে যেতে দেওয়া হল না তাদের। পলিটিকো’ এবং বিবিসির মতো যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার হলে রানির ‘লাইং-ইন-স্টেট’-এ যোগ দিতে এসেছিলেন ওই চিনা সরকারি প্রতিনিধি দলটি। কিন্তু, ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েল তাঁদের ওয়েস্টমিনস্টার হলে প্রবেশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বেজিং-এর বিরুদ্ধে শিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের উপর দুর্ব্যবহার করার অভিযোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল চিন। তারই প্রতিশোধে এই পদক্ষেপ করেছেন স্পিকার, এমনটাই জানা গিয়েছে। চিনকে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হলেও সংসদ ভবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, চিনা রাষ্ট্রপ্রধানকে রানির শেষকৃত্যে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন ব্রিটিশ সাংসদরা। বেজিংয়ের প্রতিনিধিদের সংসদ ভবনে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার আবেদন জানিয়ে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই সংসদের স্পিকারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন ব্রিটিশ সাংসদরা। বিদেশ সচিব জেমস ক্লিভারলিকেও চিঠি পাঠিয়ে চিনা প্রতিনিধিদের আসা ব্রিটেনে আসা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল।
তারপরও সৌজন্য দেখিয়ে ব্রিটেনের বিদেশ, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১০ ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, যে দেশগুলির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তাদের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানানোটাই রীতি। চলমান যুদ্ধের কারণে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় রাশিয়া, বেলারুশ ও মায়ানমারের জাতীয় সরকারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত ব্রিটেনে আসবেন না শি জিনপিং, এমনটাই জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁর জায়গায় ভাইস-প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশান এক প্রতিনিধিদলকে পাঠানো হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে উইঘুর সমস্যা ও আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে যুক্তরাজ্য-চিন সম্পর্কের উত্তেজনা বেড়েছে। এর মধ্যে এই পদক্ষেপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২১ সালের মার্চে, চিনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে অভিযোগ করে চিনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ব্রিটেন। পাল্টা যুক্তরাজ্যে নয় ব্যক্তি এবং চারটি সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বেজিং। তাদের মধ্যে পাঁচজন ব্রিটিশ সাংসদ ছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা স্যার ইয়ান ডানকান স্মিথ, সাংসদ টম টুগেনধাত, নিল ও’ব্রায়েন, টিম লাউটন এবং নুসরাত ঘানি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চিনা ভূখণ্ডে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।