বেজিং : করোনার (Covid 19) উৎস কোথায়, এই প্রশ্নের প্রমাণ সহযোগে কোনও উত্তর না পাওয়া গেলেও বুঝতে কারও বাকি নেই যে চিনের উহান (Wuhan) শহরেই অতিমারির সূত্রপাত। ২০১৯-এর শেষের দিকে বিশ্বের কাছে সেই পরিস্থিতির খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে সব সাহসী সাংবাদিক (Journalist) উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁদের অনেককেই বিপাকে পড়তে হয়েছে। তেমনই এক সাংবাদিক চিনের জেলে বন্দি। অনশন করে প্রতিবাদ জানাতে জানাতে তিনি বিধ্বস্ত। সম্প্রতি ঝ্যাং ঝান নামে ওই সাংবাদিকের ভাই টুইটে জানিয়েছেন, বোনের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। হয়ত আর বেশি দিন বাঁচবেন না তিনি।
৩৮ বছরের ঝ্যাং ঝান পেশায় আইনজীবী। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির খবর পেয়ে ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে উহানে গিয়েছিলেন তিনি। স্বতন্ত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি। সংক্রমণের সেই ভয়াবহতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন ঝ্যাং। স্বাভাবিকভাবেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছিল চিন প্রশাসন। আর তার জেরেই শাস্তি পেতে হয়েছে তাঁকে। তাঁকে চার বছরের জেলবন্দি থাকার শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
সেই থেকেই জেলবন্দি রয়েছেন ঝ্যাং। আমরণ অনশনের ব্রত নিয়েছেন তিনি। সরকারের বিরুদ্ধে এ ভাবেই জানাচ্ছেন প্রতিবাদ। বিশ্বের দরবারে করোনার সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আনা সেই সাংবাদিকের জীবন আজ কার্যত বিপন্ন। তাঁর আত্মীয় ও কাছের বন্ধুরা জানাচ্ছেন, মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ঝ্যাং। সাংবাদিকের ভাই ঝ্যাং ঝু সম্প্রতি টুইটারে দাবি করেছেন, তাঁর বোনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। আর বেশিদিন বাঁচবে না। হয়তো এই শীতেই তাঁর মৃত্যু হতে পারে।
কেন ঝ্যাং-কে জেল থেকে ছাড়া হচ্ছে না, কী তাঁর অপরাধ, কেন তাঁর অনশন ভাঙার কোনও চেষ্টা করা হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে, সেই প্রশ্ন সামনে আসছে। প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনও। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ঝ্যাং-এর সঙ্গে দেখাও করতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁর পরিবারের লোকজনকে। এমনকি তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। ঝ্যাং-এর পাশে দাঁড়িয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। চিন সরকারের এই ভূমিকার কড়া নিন্দা করেছে তারা। ঝ্যাং-কে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চিন প্রশাসনকে আর্জিও জানিয়েছে তারা। যদিও চিন সে সবে আমল দিচ্ছে না।
চিনের বিদেশমন্ত্রকের তরফ থেকে মুখাপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানিয়েছেন, এ ভাবে মানবাধিকার সংগঠনকে সামনে আনা আসলে চিনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, চিনে আইনের শাসন চলে। যে কেউ আইন ভাঙলেই তাঁকে শাস্তি পেতে হবে।
সূত্রের খবর, জেলের মধ্যে কার্যত ধুঁকছেন ঝ্যাং। কিছুতে ভর না দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও নেই তাঁর। শুধু ঝ্যাং নয়, উহানের খবর প্রকাশ করে আরও তিন সাংবাদিক চেন কুইশি, ফ্যাং বিন এবং লি জেহুয়াকেও আটক করেছিল প্রশাসন। করোনার সংক্রমণের গত দেড় বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও সংক্রমণের গতি রুদ্ধ হয়নি।
আরও পড়ুন : Oral Covid Pill: ওষুধ খেয়েই সারবে করোনা! প্রথমবার অনুমোদন পেল ‘মোলনুপিরাভির’