
ওয়াশিংটন: লক্ষ্য ছিল মার্কিন মুলুকের খাদ্যশস্যে এক ভয়ঙ্কর মহামারির জীবাণু মেশানোর। যাতে ধান, গম, ভুট্টা, বার্লির প্রতিটি দানার ভিতরে মহামারীর জীবাণু ঢুকে যায়। সেই খাবার যে খাবে, সেই আক্রান্ত হবে মহামারিতে। প্রথমে এক দুজন, ক্রমেই মার্কিন মুলুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে সেই মহামারি। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। লোকসান হবে কোটি কোটি ডলারের, এই ছিল ছক। আপাতত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সেই ছক বানচাল করেছে। গ্রেপ্তার করতে পেরেছে দুই চিনা প্রেমিক-প্রেমিকাকে। দুজনে মিলে আমেরিকাতে এই ভয়ঙ্কর জৈব অস্ত্র আমদানি করে চিনা গবেষণাগার থেকে। দুজনেই চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তাঁদের গ্রেপ্তারির খবর জানিয়েছেন খোদ এফবিআইয়ের ডিরেক্টর কাশ প্যাটেল।
ধৃত দুজনই চিনা নাগরিক। জিয়ানের বয়স ৩৩, তাঁর প্রেমিক ৩৪ বছরের লিউ। দুজনে মিলে মার্কিন খাদ্যশস্যে মহামারির ‘বিষ’ মেশানোর চেষ্টা করছিল। লক্ষ্য ছিল, আমেরিকাতে মহামারি ছড়িয়ে দেওয়া। গোটা পরিকল্পনাই হয় চিনে বসে। চিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্যাথোজেন’ নিয়ে গবেষণারত জিয়ানকে সরাসরি অর্থসাহায্য করত চিনা কমিউনিস্ট পার্টি, জানিয়েছে এফবিআই।
উদ্ধার হওয়া প্যাথোজেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে এক ধরণের মারাত্মক ‘ফাঙ্গাস’ তৈরি করতে সক্ষম হয় জিয়ান। নাম ‘Fusarium Graminearum’, যা আসলে এক ধরণের মহামারি ঘটাতে সক্ষম জৈবিক অস্ত্র বা বায়োলজিক্যাল ওয়েপন। এটি সরাসরি মানবদেহে প্রবেশ করানো যায় না। কিন্তু খাবারের মাধ্যমে দেহে ঢোকে। তখন বেশি ক্ষতি হয় ও একসঙ্গে বহু মানুষ আক্রান্ত হন। খাদ্যশস্যে এই ছত্রাক ‘হেড ব্লাইট’ নামে এক ধরণের রোগের জন্ম দেয়। কোটি কোটি টাকার ফসলেরও ক্ষতি হয়। এটি ফসলের এক ধরণের বিরল রোগ। চাল, গম, বার্লি, ভুট্টা, বার্লিতে ‘মাইকোটক্সিন’ ঢুকে যায়। ফসলে মহামারি লেগে যায়। বাইরে থেকে দেখে সামান্যই বোঝা যায়। কিন্তু সেই ফসল থেকে উৎপন্ন চাল বা ময়দা দিয়ে তৈরি যে কোনও খাবার খেলে মানবদেহেও প্রবেশ করে এই ছত্রাকঘটিত রোগ। প্রথমে বমি, তারপর লিভার ড্যামেজ ও প্রজননতন্ত্রে স্থায়ী ক্ষতি তৈরি করে দেয় এই ছত্রাক।
এফবিআই ডিরেক্টর জানিয়েছেন, ডেট্রয়েট মেট্রোপলিট্যান এয়ারপোর্ট দিয়ে বিশেষ বাক্সে করে এই জৈব অস্ত্র চিন থেকে আমেরিকায় আনা হয়। কারও যাতে সন্দেহ না হয় তাই মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার আড়ালে আসলে এই জৈব অস্ত্রকে আরও মারাত্মক চেহারা দেওয়ার কাজ চালিয়ে যায় প্রেমিক-প্রেমিকা। স্থানীয়দের টাকা দিয়ে এই ‘বিষ’ ফসলে মেশানোর চেষ্টা করে।তখনই মার্কিন গোয়েন্দাদের নজরে পড়ে যান দুজনে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহ হওয়ায় তাঁদের তলব করা হয় এফবিআইয়ের ডেট্রয়েটের ফিল্ড অফিসে। তখনই জেরায় দুজনে ভেঙে পড়েন ও হামলার পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে নেন বলে এফবিআই সূত্রে খবর। মার্কিন গোয়েন্দারা শুনে তাজ্জব বনে যান।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত দুজন মিলে মার্কিন মুলুকে এত বড় জৈব হামলার ছক কষছিল? ধৃত দুজনকেই কোর্টে তোলা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। পিছনে আর কোনও বড় মাথা রয়েছে কি না, আমেরিকাতে তাঁদের আর কোনও সহযোগী আছে কি না, জানার চেষ্টা চালাচ্ছে এফবিআই।