
নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশ কি এবার সরাসরি ভারত-বিরোধিতার পথে হাঁটবে? হঠাৎ কেন এ কথা? কারণ, মুহাম্মদ ইউনূস পাক সেনাকর্তার হাতে যে উপহার তুলে দিলেন, সেখানে অসমের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যকেও বাংলাদেশের অংশ বলে দেখানো হয়েছে।
হাসিনা সরকারের উৎখাতের পর থেকেই মিজোরাম, ত্রিপুরা লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ বেড়েছে। ৩১৮ কিলোমিটার লম্বা মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্তে জঙ্গি গতিবিধিও টের পাচ্ছিল একাধিক কেন্দ্রীয় এজেন্সি। গোয়েন্দাদের অনুমান, পাক গুপ্তচর সংস্থা ISI একাধিক এনজিও-র আড়ালে এই অনুপ্রবেশকারী ও জঙ্গিদের অর্থ যোগাচ্ছিল। আর এই দুষ্কর্মের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশের মাটি। এক কথায়, ভারতকে অশান্ত করতে বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে পাকিস্তান। আর এবার সেই বাংলাদেশেরই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান খোদ পাক সেনাকর্তার হাতে তুলে দিলেন ‘বিকৃত’ মানচিত্র। যেখানে অসম ও উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যকে বাংলাদেশের অংশ হিসাবে দেখানোর অভিযোগ উঠে গেছে।
রবিবার পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারপার্সন জেনারেল শাহির শামশাদ মির্জা ঢাকায় এসে ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। পাক জেনারেলের হাতে ইউনূস উপহার হিসাবে ‘আর্ট অফ ট্রায়ামফ’ বলে একটি বই তুলে দেন। ওই বইয়ের প্রচ্ছদেই বাংলাদেশের একটি বিকৃত মানচিত্রের ছবি দেখতে পাওয়া গেছে। এই বিকৃত মানচিত্রের ছবি বাংলাদেশে অবশ্য খুব একটা অপরিচিত নয়। কারণ ‘গ্রেটার বাংলাদেশের’ প্রচারে মৌলবাদীরা এই মানচিত্র ব্যবহার করে। মানচিত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্য ও অসমকে বাংলাদেশের অংশ বলে দেখানো হয়। এবার খোদ সরকারের প্রধানের হাতে এই বিকৃত মানচিত্র এবং সেটাও তিনি একজন পাক জেনারেলের হাতে তুলে দেওয়ায় ব্যাপক বিতর্ক ছড়িয়েছে। ১৯৭১-এ পাকিস্তানের অত্যাচারের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে, আলাদা রাষ্ট্র গড়তে সাহায্য করেছিল ভারত। এবার সেই পাকিস্তানের হাতেই কি না এমন মানচিত্র তুলে দিলেন ইউনূস, যেখানে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’-কে বাংলাদেশের অংশ বলে দেখানো হয়েছে!
ইউনূসের অবশ্য এরকম কীর্তি আগেও ঘটিয়েছেন। গত এপ্রিলে বিনিয়োগ টানতে চিন সফরে গিয়ে উত্তর পূর্ব ভারতকে ‘ল্যান্ড লকড’ বলে বিতর্ক বাড়ান ইউনূস। পাশাপাশি নিজেদের ‘সমুদ্রের অভিভাবক’ বলেও চিনা বিনিয়োগ টানতে হাত পাতেন। তাঁর ওই মন্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বিদেশমন্ত্রক। বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাতিল করে দেয়। নেপাল, ভুটান, মায়ানমারে পণ্য পাঠাতে ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে দেওয়ায় মাথায় হাত পড়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের। কিন্তু তারপরেও ইউনূস ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভারত বিরোধিতা থামেনি। ইউনূস ঘনিষ্ঠ মেজর জেনারেল ফজলুর রেহমান পহলগাঁও হামলার পর বলেন, চিনের সঙ্গে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের উচিত ভারতের উত্তর-পূর্বের দখল নেওয়ার। আরেক ইউনূস ঘনিষ্ঠ নাহিদুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামকে গ্রেটার বাংলাদেশের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে দেখান। এবার ইউনূসের নয়া বেয়াদপির কী জবাব দেয় কেন্দ্র বা বিদেশমন্ত্রক, সেদিকেই নজর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মহলের।