লন্ডন: আমরা স্কুলের বইতে পড়েছি, বিজ্ঞানীরাও দীর্ঘকাল ধরে মনে করতেন শুধুমাত্র উদ্ভিদ এবং শৈবাল-সহ সালোকসংশ্লেষী প্রাণীরাই পৃথিবীতে অক্সিজেন তৈরি করতে পারে। সালোকসংশ্লেষ কথাটার মধ্যেই আলো আছে। অর্থাৎ, আলো ছাড়া অক্সিজেন তৈরি অসম্ভব বলে মনে করা হত। কিন্তু, পৃথিবীর গভীর-সমুদ্রতলে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছত পারে না, সেখানে কি অক্সিজেন তৈরি হতে পারে? এতদিন পর্যন্ত এর উত্তর ছিল, না। কিন্তু, এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গভীর সমুদ্রের নীচেও, সম্পূর্ণ অন্ধকারে ধাতব খনিজের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে রহস্যময় ‘ডার্ক অক্সিজেন’ বা ‘অন্ধকার অক্সিজেন’।
সম্প্রতি, নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে “অতল সমুদ্রতলে অন্ধকার অক্সিজেন উৎপাদনের প্রমাণ” নামে এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, সালোকসংশ্লেষ ছাড়াও অন্য উপায়েও অক্সিজেন তৈরি হয় এই পৃথিবীতে। আন্তর্জাতিক গবেষকদের এই দলটি আবিষ্কার করেছে, প্রাণের সম্পৃক্ততা ছাড়াই সেখানে অক্সিজেন তৈরি হচ্ছে। আর সেই অক্সিজেন টিকিয়ে রেখেছে গভীর সামুদ্রিক জীবনকে, যারা সম্পূর্ণ অন্ধকারে বেঁচে থাকে।
তবে, এই ‘অন্ধকার অক্সিজেনে’র সন্ধান অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৩ সালে, প্রশান্ত ফিল্ডওয়ার্কে গিয়েছিলেন স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর মেরিন সায়েন্সের বিজ্ঞানী, অ্যান্ড্রু সুইটম্যান। ফিল্ডওয়ার্কের সময়, সুইটম্যান এবং তার সহযোগীরা ক্লারিওন-ক্লিপারটন জোনে সমুদ্র-তলের ইকোসিস্টেমগুলি অধ্যয়ন করছিলেন। এই স্থানে, প্রাকৃতিকভাবে সমুদ্রের তলদেশে বেড়ে ওঠা খনিজ আমানত আছে বলে মনে করা হয়। তারই সন্ধানে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সময়ই তাঁরা সেখানে ‘অন্ধকার অক্সিজেন’-এর সন্ধান পেয়েছিলেন।
প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন, তাঁদের যন্ত্রপাতিতেই কিছু ভুল আছে। সুইটম্যান জানিয়েছেন, এই গ্রহে অক্সিজেন তৈরি করে এতমাত্র সালোকসংশ্লেষী জীবরাই, এমনটাই তাঁরা জানতেন। কিন্তু, প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে কালো এবং বৃত্তাকার পাথর পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। যা থেকে অক্সিজেন উৎপন্ন হচ্ছিল। যন্ত্রের ত্রুটি দূর করতে তাঁরা বিকল্প যন্ত্রপাতি নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে। গত ১০ বছর ধরে, সব যন্ত্রেই তাঁরা ওই অদ্ভুত অক্সিজেনের সন্ধান পেয়েছিলেন। এরপর আর বাস্তবটাকে অস্বীকার করতে পারেননি।
সুইটম্যান বলেছেন, “এখন আমরা জানি, গভীর সমুদ্রেও অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। যেখানে কোনও আলো নেই। আমি মনে করি, বায়বীয় জীবন কোথায় শুরু হতে পারে, আমাদের এই প্রশ্নগুলো পুনরালোচনা করা দরকার।”