
কলকাতা: ইউনূস কি খাল কেটে কুমির আনলেন? নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তান নিয়ে আমেরিকা-রাশিয়ার দড়ি টানাটানি রুখতে পাকিস্তানের হাতে তৈরি হয়েছিল তালিবান গোষ্ঠী। এখন সেই তালিবানরাই সরকার তৈরি করে অসিম মুনির তথা পাকিস্তানের গলায় কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে। তবে এই বৃত্তটা পূর্ণ হতে সময় লেগেছে কয়েক দশক। কিন্তু বাংলাদেশে তা কি দেড় বছরেই পূর্ণ হতে চলেছে? ‘স্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির জন্য বাংলাদেশের গদিতে মুহাম্মদ ইউনূসকে যাঁরা বসিয়েছিলেন, এবার তাঁদের হাতেই ভবলীলা সাঙ্গ হবে প্রধান উপদেষ্টার? বাংলাদেশের আকাশে এখন পাক খাচ্ছে এই কথা গুলো। দাবি উঠেছে আরও একটি সরকার তৈরির। নতুন সরকার! বিপ্লবীদের সরকার!
বাংলাদেশের উপর দিয়ে যখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে ইউনূস তখন বিদেশের মাটিতে। তবে কী ঘটছে, কেন ঘটছে, সবটাই জানতেন তিনি। প্রতিটি বিষয়ে ছিলেন অবগত। জাতীয় নাগরিক পার্টি তৈরির পর নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, ৪ঠা অগস্ট অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগের দিন রাতে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। দেশের দায়িত্ব নিতে হবে, ইউনূসকে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই মতোই ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা দেশছাড়া। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সরকার।
৮ই অগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে শপথ গ্রহণ করলেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। বঙ্গভবনের দরবার হলে তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। বাংলাদেশের শুরু হল নতুন অধ্যায়।
এই সব পুরনো কথা এখন নাড়াচাড়া করার কারণ কী? পুরনো কাসুন্দি তো না ঘাঁটাই শ্রেয়। ৮ই অগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে কী হল! সরকার তৈরি হল, কিন্তু কোন সরকার? এই সরকারের কথা কি বলেছিল আন্দোলনকারীরা? এই সরকার কি চেয়েছিল জামাতরা? এই সরকার কি চেয়েছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বিদেশের মাটি থেকে জ্বালানি জোগানো মৌলবাদীরা? উত্তরটা খুব সহজ, খুব স্পষ্ট, তা হল চায়নি। তা হলে কী চেয়েছিল? বিপ্লবী সরকার। তা হলে জুলাই আন্দোলন বিপ্লব ছিল না?
বাংলাদেশের অন্দরে পাক খাওয়া নতুন গুঞ্জনকে কাচের মতো স্বচ্ছ করে তুলে ধরতে একটু তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ টানা প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের একাংশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছিল। তা হল জুলাই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থান নাকি বিপ্লব। কিন্তু এই দুইয়ের ফারাকটা কোথায়?
গণঅভ্যুত্থান হল অনিয়মের বিরুদ্ধে জাগরণ, স্বতঃস্ফূর্ত, ব্যাপক। যার ফলাফল বহমান সরকারকে তুলে ফেলে বা কখনও উপড়ে না ফেলেও এমন একটা ব্যবস্থা কায়েম করা যা আগের ভুল-ত্রুটিগুলি সংস্কার করবে। যে কথা গত প্রায় দেড় বছর বারংবার ফিরে এসেছে। জুলাই আন্দোলনকে সংস্কারমুখী আন্দোলন বলেছেন খোদ উপদেষ্টারাই। অন্যদিকে বিপ্লব বিষয়টা অনেকটা ভিন্ন। যা জন্ম নেয় গভীরভাবে প্রোথিত সামাজিক ও রাজনৈতিক অসন্তোষ থেকে। যা সুপরিকল্পিত, যা আমূল পরিবর্তনের দাবি করে। হাতের কাছে প্রচুর উদাহরণ। চিন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফিলিপাইনস, ফ্রান্স। কিন্তু বাংলাদেশ নয়। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিপ্লব নয়, অভ্যুত্থান। সেই ক্ষোভ ঘিরেই বাংলাদেশের অন্দরে নতুন করে জন্ম নিয়েছে নতুন দাবি।
সাম্প্রতিককালে ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘিরে বাংলাদেশে একটি প্রশ্ন বারংবার মাথা চাড়া দিয়েছে। তা হল নির্বাচন কি হবে? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এই নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভোট বানচাল করতেই এসব নয় তো?
এই প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক। সামনের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা করেছে সেদেশের নির্বাচন কমিশন। তারপরই এই পরিস্থিতি। যা পদ্মাপাড়ে তৈরি করেছে নতুন গুঞ্জন। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে রাস্তায় নামা উগ্রপন্থীদের একাংশ দাবি করছেন, বিপ্লবী সরকার তৈরির জন্য। তাঁদের মুখে বিদেশে বসে থাকা একাধিক বাংলাদেশি ইউটিউবারের নাম। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যাঁরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জ্বালানির জোগান দিয়েছিল। শুধু তা-ই নয় একাংশের ধারণা, বাংলাদেশে একেবারে গ্রাউন্ড লেভেল থেকে বদলে দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ। বিপ্লবী সরকার গঠনের জোর দিচ্ছে নাহিদ ইসলামদের জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াত, হিজবুত তাহেরির মতো দলগুলি। কারণ, বিপ্লবী সরকার একমাত্র পন্থা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের খোলনলচে সম্পূর্ণ ভাবে বদলে ফেলা সম্ভব। তৈরি করা যাবে নতুন সংবিধান, ক্ষমতা হারাবে সেনাও। এবার এই ‘স্বপ্ন’ অলীক নাকি বাস্তব হওয়ার পথে সেই উত্তর হয়তো সময় দেবে।